গত ৫ বছরে অগণিত খুন, গোটা পাঁচেক ক্রসফায়ার, আর মাদকের নীলচে আগুনের লকলকে শিখার তাপে পুড়ছে দ্বীপ উপজেলা।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি হয়েও নেই কোন সৌন্দর্য। সামাজিক ব্যাধিতে ভরপুর, সরকারী দপ্তরের অনিয়ম, অব্যাবস্থাপনা, নিম্নমানের যোগাযোগ ব্যাবস্থা, আর দুর্নীতির আখড়া হয়ে আজ তিলে তিলে পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে এই অঞ্চল৷
সৎ নীতিবান আর সুস্থ রাজনীতির দুঃসময়ের ঘোড়সওয়ারেরা আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত।
ক্ষমতার চাদর মুড়িয়ে প্রশাসনের কুয়াশা জড়িয়ে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিনিয়ত অস্ত্রের ঝন ঝন শব্দে কেঁপে উঠে আকাশ বাতাস।
পথ চলতে গিয়ে ছিনতাই থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চাদের অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে এখানে।
অস্ত্রের কারখানা আর অপুরনীয় ভান্ডার নিয়ে গত কয়েক বছরে ধরা খেয়েছে শতাধিক সন্ত্রাসী। আবার মাদক ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়ত নাজেহাল সাধারন মানুষ। সাংবাদিকতার মহান পেশাকে সমুন্নত রেখে মাদকের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়েও গুরুতর আহত হয়েছে সাংবাদিকও।
মামলা নেই, কোন অভিযোগ নেই নেই কোন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত, তবুও বাড়ি ছাড়া শ তিনেক যুবক।
প্রশাসনিক অবকাঠামো এতটাই বেপরোয়া, যে প্রায় দশ হাজার অবৈধ মোটরসাইকেলের বিচরণ এই ছোট্ট দ্বীপে, আবার তারই বৈধতা দিয়েছে প্রশাসন।
চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি আর বেপরোয়া মূল্যের হিসেব করতে গেলে বই লিখে শেষ হবেনা।
কয়েক বছর পূর্বের একটা সী এম্ব্যুলেন্স পানিতে নামেনি একটিবার। প্রসূতি মায়েদের অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে সাগর পাড়ি দিতে হয়।
আর এতসব দুঃখ বেদনা নিয়েও সৌন্দর্যের কমতি নেই এখানে। বিশাল সাগরবুকে ভেসে থাকা ছোট এই দ্বীপটির নাম সন্দ্বীপ।
দেশের ১১ শতাংশ বৈদেশিক রেমিটেন্সের যোগান দেয় সন্দ্বীপের প্রবাসীরাই।
একজন পিতার কোল থেকে অপহৃত সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়ার গুরুভার বহন করে নেয় এখানকার যুবকেরা।
এক অসহায় ভাইয়ের সুস্থতার জন্য শুধু মাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যেই যোগাড় করে লক্ষ লক্ষ টাকা। নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে যায় দেশের বাইরেও।
এই সোনার সন্দ্বীপের অগনিত সূর্যসন্তান আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সহ বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আজো নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে সন্দ্বীপের শত শত যুবক।
তারপরও দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি সন্দ্বীপিদের, নিজেদের ভূমি নোয়াখালীর দখলে দেখে প্রতিবাদ করতে গিয়েও থমকে গেছে আন্দোলন। অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুর অবকাঠামো আর অপরুপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার ব্যার্থতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে চার লক্ষ মানুষকে।
# ইশতিয়াক আহমেদ মেরাজ