আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
রবিবার, ০১ জানুয়ারী, ২০২৩   |   sonalisandwip.com
সোনালী সন্দ্বীপের সম্পাদকের সাথে ঘরোয়া পারিবেশে লেখক ড.সাজ্জাদ হোসেন

 যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বর গুপ্তের ভাষায়- ভ্রমিছে মণি মুক্তা হেম/স্বদেশের প্রিয় প্রেম/তার চেয়ে রত্ন নাই আর। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই দেশ। দেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি নাগরিকের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বরে বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে শুরু করে দেশ। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সোনার বাংলার স্বপ্নকে নিঃশেষ করতে উদ্যত হয় পাকিস্তানি পরাজিত গোষ্ঠী।

দীর্ঘকাল পরে হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ফিরে পায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন, উন্নয়ন অভীষ্ট এবং সার্বিক অগ্রগতি এখন বিস্ময় সৃস্টি করেছে পৃথিবীতে। বাংলাদেশ তার হারানো পথ ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন অদম্য। জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের গৌরবের মুকুটে অসংখ্য গর্বের পালক যুক্ত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, যানজটমুক্ত ঢাকা শহর বিনির্মাণের লক্ষ্যে মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা এবং সর্বোপরি ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পথে দৃঢ় পথচলা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপকল্প গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ হবে স্মার্ট ও অত্যাধুনিক। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হলোÑ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা এখানেই থেমে থাকিনি, ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে সেই পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। আগামীদিনে যে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি হবে সেখানে সব হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে।

সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের সৈনিক তরুণদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি আমরা। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো, পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের জনগণের জন্য রেখে যাচ্ছি। এই বদ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীন ও সুন্দরভাবে যেন তারা বাঁচতে ও বসবাস করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও প্রস্তুত করে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন সব নির্ভর করছে আমাদের তরুণ ও যুব সমাজের ওপর। তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতিÑ এটাই ছিল আমাদের ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহার। আমরা সেই কাজই করে চলেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ যেভাবে ক্রান্তিলগ্নে দেশের জন্য লড়াই করে গেছে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য, আমাদের প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও ছাত্র ও তরুণদের যথার্থ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাবে। ইতোমধ্যে সেই প্রমাণও তারা দিয়েছে। বিদায়ী বছরের শেষদিকে গঠিত সংগঠনটির নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ সারাদেশের নেতাকর্মীদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১০ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছে।

১০ দফা নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

ক. দেশের সকল স্তরের নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকা- প্রচার করবে এবং দেশবিরোধী সকল অপচেষ্টা ও গুজব-প্রোপাগান্ডার সমুচিত জবাব দেবে।

খ. বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ বজায় রেখে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

গ. স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট ক্যাম্পাসে রূপদান করতে, শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী উপায়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে।

ঘ. স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টরা যেন নামে-বেনামে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সে লক্ষ্যে উপযুুক্ত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সাহিত্য কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে।

ঙ. শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে নানামুখী উৎসব, প্রতিযোগিতা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্যোগ নিতে হবে।

চ. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ, বায়ু-পানি-মাটি-পরিবেশ-শব্দদূষণ রোধে ভূমিকা রাখা; অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ, জ্বালানি সাশ্রয়ে বিদু্যুৎ-পানি-গ্যাস-তেলের ব্যবহারে যতশীল হওয়া; বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মিতব্যয়ী হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি ইউনিট শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিশ্বের সামনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানা সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো- প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কিত গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রম বাড়ানো। এ লক্ষ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে বিশেষায়িত গবেষণা কোষ স্থাপন। জ্ঞান ও দক্ষতায় শিল্পক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও সমন্বয় বৃদ্ধি করার কর্মকৌশল নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও এফবিসিসিআইয়ের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।

প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয় করতে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে উদ্বুদ্ধকরণ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভিত্তিক সিলেবাসে প্রয়োজনে সংশোধনী আনা। বিগত দশ বছরে আইসিটি খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কালে বাংলাদেশ হবে শিক্ষা-গবেষণা ও প্রযুক্তির ডেস্টিনেশন। ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে আমাদের আইসিটি সেক্টরের মেধাবী তরুণরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইটেক পার্কগুলোতে আইসিটি মন্ত্রণালয় যুক্ত রয়েছে নানাভাবে। পরিকল্পিতভাবে দক্ষ আইসিটি টেকনোলজিস্ট তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা দেশের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন। সামগ্রিক কার্যক্রমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবদান রাখবে। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পর স্মার্ট বাংলাদেশ এখন অপেক্ষমাণ। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে শেষ করছেন। বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ঋণগ্রস্ত দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। বাঙালি জাতি আজ প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কল্যাণে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের ওপর ভর করে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উক্ষেপণ করেছে। দেশে এখন আইটি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি বিরাজমান। আছে সাবমেরিন ক্যাবলের সুবিধা, সরকারি সেবাগুলো ডিজিটালাইজড, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার দৃশ্যমান, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র, আইটি ও হাইটেক পার্ক নির্মাণ, অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রাম হচ্ছে শহর। ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন। দেশে এমন উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার কারণে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন এক দেশে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের ফসল আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ২০২২ সালের জুন মাসে বাঙালির গৌরবের স্মারক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বছরের শেষপ্রান্তে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা উদ্বোধন করেছেন মেট্রোরেল।

সব বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সুদৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করছেন  প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারাবিশ্বে আমরা মর্যাদা অর্জন করেছি। মেট্র্রোরেল বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্য, যা উপহার এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি গোটা পৃথিবীর জন্য রোল মডেল। তাঁর হাত ধরেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ২০২৩ সালেও যে কোনো দুর্যোগ ও প্রতিকূল মোকাবিলা করে অধিকতর অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। এজন্য আমাদের সকলকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির মূলোৎপাটনে সচেষ্ট থাকতে হবে।

লেখক : বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন (ইউজিসি), পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল), সহ-সভাপতি, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।