আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩   |   sonalisandwip.com
সন্দ্বীপ থানায় কাগজপত্রহীন শতাধীক হোন্ডা আটক; অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগ, পুলিশ বলছে ভিত্তিহীন

বাদল রায় স্বাধীন :: গত ২৬ মার্চ সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান চোরাইকৃত হোন্ডা আটক বিষয়ে একটি সংবাদ ব্রিফিং করেছিলেন কোতোয়ালী থানায়। সেখানে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি যাওয়া ২৪ টি চোরাই হোন্ডা আটক করা হয়েছে সন্দ্বীপ থেকে। ধৃত চোর চক্রের তথ্যের ভিত্তিতে সেগুলো আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সে ব্রিফিং-এ তথ্য গোপন বা তথ্যের অসঙ্গতি বিষয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে সন্দ্বীপে।

মুলত চোরাই হোন্ডা ছিলো ছয়টি বাকি গুলো সন্দেহজনক বা কাগজপত্রহীন বা আলামত সংগ্রহের জন্য আটক করা এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেছে সন্দ্বীপ থানা সুত্রে। কিন্তু প্রেসব্রিফিং এ ২৪ টিই চোরা হোন্ডা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো। এবং সিএমপির সেই অভিযানটি ছিল আকস্মিক, সন্দ্বীপ থানার সাথেও তেমন সমন্বয় ছিলোনা এমন তথ্যও উঠে এসেছে নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে।

স্যোশাল মিডিয়ায় সকলের মন্তব্য কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত সিএমপি পুলিশ আটক করে গাড়ীগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে সংবাদ সন্মেলন করে। সিএমপি পুলিশ এ বিষয়ে সন্দ্বীপে সংবাদ সন্মেলন করতে পারতো।চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মেলনে এ বিষয়ে সংবাদকর্মীদের তেমন কিছু জানার সুযোগ ছিলোনা বলে সংবাদ কর্মীরা ঢালাওভাবে পুলিশের প্রদত্ত তথ্যগুলো হজম করেছেন। সে হিসাবে পত্রিকায় বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হেডলাইন হলো “চোরাই হোন্ডার স্বর্গ সন্দ্বীপ” বা সন্দ্বীপ থেকে ২৪ টি চোরাই হোন্ডা গ্রেফতার কিংবা চট্টগ্রামে চুরি যাওয়া হোন্ডা বিক্রির নিরাপদ স্থান সন্দ্বীপ।এতে সন্দ্বীপের সুনাম বিনষ্টের অভিযোগ তুলছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে এই সংবাদ সন্মেলনের পর থেকে সন্দ্বীপের রাস্তা থেকে ঢালাও ভাবে আটক করা হচ্ছে হোন্ডা।পুরো সন্দ্বীপ থানার মাঠ জুড়ে জমা হয়েছে আটক কৃত কয়েকশ হোন্ডা। কাগজপত্র বা লাইসেন্স কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন হোন্ডা আটক করা হচ্ছে বলে সন্দ্বীপ থানা থেকে দাবী করলেও অনেকের অভিযোগ সকল কাগজপত্র থাকার পরও হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। এছাড়াও বকশিস বা জরিমানা হিসাবে দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। দুর্লভ সাহা নামে একজন বলেন এনাম নাহার মোড় থেকে আমার গাড়ি আটকের পর এএসআই হুমায়ুন আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা নিয়ে থানার মসজিদের পাশ দিয়ে গাড়ি বের করে দিয়েছে। অথচ আমার সেল রিসিট সহ অন্যান্য ডকুমেন্ট ছিলো।কিন্তু টাকা ছাড়া কোন কথায় তারা শুনতে নারাজ। বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছি।

এ ব্যাপারে এএসআই হুমায়ুনের মন্তব্য জানতে চেয়ে তার 01683-448380 নাম্বারে দুইবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মোঃ ফয়সাল নামে এক যুবক জানান নতুন গাড়ি ও কাগজ পত্র নিয়ে রাত্রে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় গিয়েছি নিজের প্রয়োজনে, হঠাৎ গাড়ি আটকিয়ে ট্রাকে তোলা শুরু করলে ড্রাইভারের মাধ্যমে বলা হলো নতুন গাড়ি, নিয়ে গেলে কখন ফেরত পাবেন সেটার নিশ্চয়তা নেই, দশ হাজার টাকা দিয়ে দিন। বাধ্য হয়ে নতুন গাড়ির মায়ায় দশ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে আসলাম।

ইকবাল দীগন্ত নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র থাকার পরও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় জরিমানা দিতে হলো ৫ হাজার। সাথে পেয়েছি অনেক নীতিবাক্য,বললো স্বাস্থ্য সহকারী বা সরকারী কর্মচারী কেউ আইনের উর্ধে নয়। এখন ওনার প্রশ্ন ৫ হাজার টাকায় তাহলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়াটা বৈধ? এভাবে অনেক চালক ফেইসবুকে স্টেটাস দিচ্ছেন কাগজ পত্র থাকার পরও পুলিশের হয়রানির বিষয়ে। কিন্তু এসব অনৈতিক টাকা লেন দেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক ওয়াসিম ফিরোজ।

তিনি বলেন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।। এই রকম অভিযোগের সত্যতা বা অভিযোগ প্রমানীত হলে সে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে পুলিশ সুপার স্যারের মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন সামনে জাতীয় নির্বাচন অবৈধ বা চোরা মোটর সাইকেলে করে কেউ যাতে নাশকতা না করতে পারে এই জন্য নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সন্দ্বীপে এই অভিযান।এবং তিনি মাত্র ৫৫ টি মটর সাইকেল আটকের ঘটনা স্বীকার করেছেন। যদিও সন্দ্বীপ থানায় শতাধীক হোন্ডা এখন আটক অবস্থায় দৃশ্যমান।

 

সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে সেই আটক কয়েকশ গাড়ি বৈধতা যাচাই ও অবৈধ গাড়ি উদ্ধার করতে সন্দ্বীপে আজ ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে আগমন ঘটেছে প্রায় অনেক ট্রাফিক ও ডিবি পুলিশের। এসেই মাঠে নেমে পড়েছেন তারা। ফলস্বরুপ হয়রানির ভয়ে পুরো সন্দ্বীপের রাস্তা হয়ে পড়েছে হোন্ডা শুন্য, যাত্রীবাহী হোন্ডা না থাকায় সিএনজি ভাড়া হয়ে গেছে তিনগুন বেশী।

 

অন্যদিকে সন্দ্বীপে প্রায় ৫ শতাধীক হোন্ডা চালক রয়েছে যারা যাত্রী পরিবহন করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে।তাদের উপার্জনে প্রায় ৩ হাজার লোকের পেট চলে। কিন্তু সন্দ্বীপে বিআরটিএ এর কোন শাখা না থাকায় চট্টগ্রামে গিয়ে তাদের পক্ষে গাড়ির লাইসেন্স বা ড্রাইভিং লাইসেন্স করা দুরহ ব্যাপার। গত কয়েকবছর হোন্ডার টোকেন বানিজ্য চলমান থাকায় তারা প্রতিমাসে ৩শ টাকায় নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতো। ফলে কিছু অদক্ষ হোন্ডা ও সিএনজি চালকের কারনে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর সেগুলো নিয়ন্ত্রনে ও কাগজ পত্রে স্বচ্ছতা আনতে উপজেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ বিআরটিএ এর প্রতিনিধিদের কয়েকদিনের জন্য সন্দ্বীপ এনে লাইসেন্স নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। যার ফলে হঠাৎ কোন প্রচার প্রচারনা বা কাগজ পত্র ঠিক করার সময় সীমা না দিয়ে এভাবে হোন্ডা আটককে এক ধরনের বানিজ্য হিসাবে আখ্যায়িত করছে হোন্ডা মালিকরা।