আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
রবিবার, ০৬ মে, ২০১৮   |   sonalisandwip.com
গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে লড়াই হবে নৌকা ধানের শীষে

স্থানীয় নির্বাচন হলেও জাতীয় আলোচনায় এখন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীর যোগ্যতা ছাপিয়ে ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই।

আওয়ামী লীগ এটিকে স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলেও ভোটারদের কাছে জাতীয় বিষয়গুলো তুলে ধরছে। তবে ভেতরে-ভেতরে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওপর চাপটা বেশি। বিশেষ করে, দুই সিটিতেই ভোট কারচুপির আশঙ্কা তুলে সরকারকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে দিয়েছে বিএনপি।

তৃণমূলের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক ও গাজীপুরে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচারেও বিএনপি থেকে গতবার নির্বাচিত দুই মেয়রের ব্যর্থতা তুলে ধরা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জোর চেষ্টা চলছে।

খুলনা ও গাজীপুরের সাবেক দুই মেয়রকে জেলে ঢোকানো, সিটির বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়াসহ মেয়রদের ব্যর্থ করতে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরছে বিএনপি। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও গণতন্ত্রহীনতার কথা বলছেন দলের প্রার্থী ও নেতারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে সিটি নির্বাচনে এগুলোই প্রাধান্য পাবে। তা ছাড়া এটা জাতীয় নির্বাচনের বছর। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় রাজনীতির ওপর ভিত্তি করেই নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হবে।

দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গাজীপুর ও খুলনায় ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক ছিল না। তারপরও ২০১৪ সালের নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতি প্রভাব ফেলেছিল ভোটের রাজনীতিতে। হেফাজতের আন্দোলনও বড় প্রভাব ফেলেছিল সেই নির্বাচনে। এবারই প্রথম গাজীপুর ও খুলনার মেয়র নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকে ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে। একই সময়ে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আন্দোলন করছে বিএনপি। আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এখনো। তাই সিটি নির্বাচনে এবার জাতীয় রাজনীতির প্রভাব আরও বেশি পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুরের নির্বাচন সমন্বয়কারী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও সিটি নির্বাচনে জাতীয় বিষয়গুলো বড় প্রভাব ফেলবে। সিটি করপোরেশন শিক্ষিত ও সচেতন ভোটারদের জায়গা। তাঁরা জাতীয় বিষয়গুলো বিবেচনা করবেনই। তা ছাড়া এ সরকারই স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক বরাদ্দ করে নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের ব্যবস্থা করেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থীর যোগ্যতার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরছি আমরা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দুই সিটি নির্বাচনেও ভোটাররা নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন।’

গাজীপুরের বর্তমান মেয়র বিএনপির এম এ মান্নান। তবে এবার দলটি প্রার্থী করেছে হাসান উদ্দিন সরকারকে। হাসান উদ্দিন সরকার ১৯৯০ সালের পর কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেননি। তারপরও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারবিরোধী মনোভাব কাজে লাগিয়ে ধানের শীষের জয় হবে বলে মনে করছে তারা।

হাসান উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবশ্যই এই নির্বাচনে প্রতীকের প্রভাব পড়বে। ধানের শীষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে। লঙ্কা পুড়লে রাবণ পুড়বে, এড়ানো যাবে না। তাই সরকারের জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দেবেন।’

গাজীপুরে গতবারের মেয়র প্রার্থীকে বদলে নতুন প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এবারের প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজের প্রচারে গাজীপুরকে নিয়ে তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। তিনি বিএনপির মেয়রের ব্যর্থতা এবং স্থানীয় উন্নয়নের কথা সামনে এনে ভোটারদের টানতে চাচ্ছেন।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আজমত উল্লা খান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে বিবেচনা করা হলেও প্রতীকের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তিনি বলেন, গত মেয়র নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে নৌকা-ধানের শীষ না থাকলেও জাতীয় ঘটনাগুলো বড় ভূমিকা রেখেছিল।

এদিকে গাজীপুরের মতো খুলনায়ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক মেয়রকে বাদ দিয়েছে বিএনপি। খুলনায় দলটির এবার মেয়র প্রার্থী সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম। তাঁর প্রচারে স্থানীয় বিষয়ের পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির প্রসঙ্গও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই সরকারের দুই মেয়াদে গুম, খুন, হামলা-মামলাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে ভোটারদের কাছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের প্রচার চালানো হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের বিজয়ের মাধ্যমে নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম হওয়ার কথা জানাচ্ছে তারা।

এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশজুড়ে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য চলছে। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই জাতীয় এসব ঘটনার প্রভাবে খুলনা সিটিতে ধানের শীষে মানুষ ভোট দেবেন বলে তিনি দাবি করেন।

তালুকদার আবদুল খালেক ছিলেন সাংসদ। মেয়র নির্বাচনে তাঁর আগ্রহ ছিল না। তারপরও স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর ব্যক্তিপরিচয় ও প্রভাবের কথা মাথায় রেখে তাঁকে খুলনায় মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খুলনার সিটি মেয়র ছিলেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে ওই সময়ের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন, একই সঙ্গে বিএনপির মেয়রদের ব্যর্থতা সামনে তুলে আনছেন তিনি। নির্বাচিত হলে আগের চেয়ে বেশি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের।

খুলনায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে খালেদা জিয়া এক দিনের জন্যও খুলনায় আসেননি; বরং তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইমামকে খুন করা হয়েছে। সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে খুন করা হয়েছে। ধানের শীষে ভোট দিলে খুলনা অবহেলিত হয়, খুনের নগরীতে পরিণত হয়, উন্নয়নবঞ্চিত হয়। তাই প্রতীকের লড়াইয়ে এখানকার ভোটাররা নৌকায় আস্থা রাখবেন বলে দাবি করেন তিনি।

খুলনার ভোটারদের একটা অংশ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। আর গাজীপুরের একটি বড় অংশের ভোটাররা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক খাতে কাজ করা কয়েক লাখ শ্রমিক ভোটার আছেন এখানে। এসব ভোটারের কাছেও ভোটের সময় নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।