আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ১১:০৬ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৮   |   sonalisandwip.com
জারিফ উদ্ধার : বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তারেক, সজিব, শাকিল ও ফিরোজ

‘আজকের মধ্যে চার লাখ টাকা দিতে হবে। কাউকে জানানো হলে মেরে ফেলা হবে জারিফকে। 'চিরকুটে এমন বার্তা লিখে সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল একটি মোবাইল নাম্বার। এরপর চিরকুটটি জারিফের স্কুল ড্রেসের পকেটে রেখে তা পাঠানো হয় তাদের বাড়িতে।

বুধবার রাতের কোন এক সময় এই জামা রেখে আসা হয় জারিফদের বাড়ির দরজার সামনে। সকালে সেই জামা থেকে চিরকুট পেয়ে থানায় যোগাযোগ করেন জারিফের বাবা মো. জ্যাকব।

এরই মধ্যে তারেক, সজিব, শাকিল ও ফিরোজ নামে স্থানীয় ৪ যুবক চিরকুটে থাকা মোবাইল নাম্বারটি শনাক্ত করতে সাহায্য নেন রবিতে কাজ করা তাদের এক বন্ধুর।

সেই বন্ধু আরেক ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় নিশ্চিত হন নাম্বারটি তাহমিনা আক্তার নামে এক নারীর। জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে নিশ্চিত করা হয় তাহমিনার বাড়ির ঠিকানাও।

দেখা যায়, জারিফদের বাড়ির মাত্র এক কিলোমিটার দূরে সেই তাহমিনার বাড়ি। অপহরণকারীর ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর তিনটি দলে ভাগ হয়ে শুরু হয় অভিযান। সাদা পোশাকে পুলিশের একটি দল ছিল নাজির হাটের আশপাশে।

তাহমিনার বাড়ির কাছাকাছি আরিফ, পারভেজ ও রাজিবসহ ছিলেন জারিফের বাবা জ্যাকব। আর তারেকসহ সেই চার যুবক যান তাহমিনার ঘরে।

তিন মিনিটের মধ্যেই অন্ধকার এক রুম থেকে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় তারা উদ্ধার করেন জারিফকে। এরপর পুলিশ এসে আটক করে অপহরনকারী তাহমিনাকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহমিনা জানায়, স্থানীয় ৩-৪ জন যুবক তাকে এই অপহরণ করতে বাধ্য করেছে। পুলিশ এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে নেপথ্যের সেই হোতাদের।

সন্দ্বীপ থানার ওসি মো. শাহজাহান বলেন, সবার সহযোগিতায় পুলিশ অক্ষত অবস্থায় শিশু জারিফকে উদ্ধার করেছে। স্থানীয় এক নারীকে ব্যবহার করে একটি চক্র এই অপহরণ নাটকটি সাজিয়েছিল। আমরা তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

জারিফের বাবা মো. জ্যাকব বলেন, জারিফের স্কুল ড্রেসে চিরকুটটি রেখে বাড়ির সামনে রাতে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। এর সূত্র ধরে স্থানীয় চার যুবক ও পুলিশের সহায়তায় জারিফকে উদ্ধার করি আমরা। পুলিশ ছদ্মবেশে ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে ছিল।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে বাউরিয়া আইল্যান্ড কিন্ডার গার্টেনের সামনে থেকে অজ্ঞাত এক নারী মায়ের পরিচয়ে শিশু জারিফকে স্কুলভ্যান থেকে কৌশলে নামিয়ে সিএনজি যোগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।

বিষয়টি জেনেই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসে সীতাকুন্ড সার্কেলের এএসপি শম্পা রানী সাহাসহ ডিবির একটি টিম। এর আগে এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু হয়।

আটক তাহমিনা বলেন, স্থানীয় একটি চক্র আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। আমি তাদের নাম পুলিশকে বলেছি। জারিফকে অপহরণের পরিকল্পনা হয়েছে অনেক আগেই। এজন্য বেশ কয়েকবার তাহমিনা জারিফের স্কুল ও বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। সোমবারও জারিফের স্কুলে যান তাহমিনা। কিন্তু সেদিন জারিফকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন এক নিকটাত্মীয়। তাই সোমবার সফল হননি তাহমিনা।

মঙ্গলবার জারিফকে আনতে কেউ স্কুলে না যাওয়ায় ভ্যানে করে বাড়ি আসতে থাকে সে। এই সুযোগে ভ্যান থেকে নামিয়ে জারিফকে অপহরণ করেন তাহমিনা। পুরো বিষয়টি তদারকি করেন নেপথ্যে থাকা সেই ৩-৪ যুবক। তারা জারিফের অপহরণ থেকে শুরু করে পরবর্তী অবস্থাও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন।

তাদেরই একজন জারিফের স্কুল ড্রেসে চিরকুট দিয়ে বুধবার রাতে তা রেখে আসেন জারিফদের দরজার সামনে। জারিফকে উদ্ধার করতে গত দুদিন ধরে তৎপর ছিলেন সন্দ্বীপের বেশ কয়েক তরুণ। দ্বীপের বিভিন্ন ঘাট থেকে শুরু করে অলিতে-গলিতে তল্লাশি চালান তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব ছিলেন সবাই। এ কারণে অপহরণের পর জারিফকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেনি চক্রটি।

তবে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন হান্নান তারেক, সজিব খান, জাহিদ হাসান শাকিল ও ফিরোজ খান পাবেল নামে চার যুবক।

তারা চিরকুটে থাকা মোবাইল নম্বরটি শনাক্ত করতে সাহায্য নেন রবিতে কাজ করা তাদের এক বন্ধুর। সেই বন্ধু আরেক ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় বৃহস্পতিবার সকালে নিশ্চিত হন নাম্বারটি তাহমিনা আক্তার নামে এক নারীর। আইডি কার্ডের সূত্র ধরে তারা বের করেন তাহমিনার বাড়ির ঠিকানাও।

উদ্ধার হওয়ার পর জারিফ তার বাবা মোহাম্মদ জ্যাকব ও মা আঞ্জুমান আরাকে জানায়, তাকে অন্ধকার একটি কক্ষে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। খাটের পাশে লাঠিও রাখা ছিল। অপহরণের দিন রাতে তাকে আলু দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া হয়। সে নিজে নিজে সেই ভাত খায়।

মা বাবা কোথায় জানতে চাইলে অপহরণকারীরা বলতো, ওরা আসবে একটু পরে। আজ সকাল বেলা তাকে শুধু দুধ খেতে দেন তাহমিনা। ভয়ে বিছানাতেই প্রস্রাব করতো জারিফ। আজ যখন তাকে উদ্ধার করা হয় তখনও ভয়ে বিছানাতেই প্রশ্রাব করে সে।

# সারোয়ার সুমন