আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ০৫:২০ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০   |   sonalisandwip.com
বঙ্গবন্ধু : এক প্রোজ্জল বাতিঘর

। ।   কাজী জিয়া উদ্দীন  । ।

নেলসন ম্যান্ডেলা যথার্থই বলেছিলেন, “আমরা সকলেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটির সঙ্গে প্রোথিত হয়ে আছি, যেমন করে প্রোথিত হয়ে আছেে প্রিটোরিয়ার জাকান্দ্রা গাছ এবং বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মিমোসা গাছগুলো”।

তিনি আবারো বলেছিলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসিগণ একটা জিনিস দেখেছে, সেটি হলো যখন গহীন গহণ রাতের ভিতর থেকে প্রভাত ফুটে উঠেছিলো, গলায় ছিলো যার স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মালা”।

ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, “আমি কোন সাধু-সন্যাসী নই, আমি দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। তবে আমার দেশের মানুষের জন্য আমি হলাম রংধনু মানুষ”। আমরাও আমাদের মাটি, জল আর নিসর্গ নিয়ে বলতে পারি, “বাতায়ন পাশে গোবাক তরুর সারি”, কিংবা “পুলকিত সচ্ছ্বলতার প্রগাঢ় নিকুঞ্জ”, কিংবা “অবারিত মাঠ, গগন ললাট, চুমে তব পদধূলি”। এদেশের মাটি স্পর্শ করে আমরা অনুভব করি- এদেশটি আমার, আমাদের, আমাদের সবার।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তির মহামন্ত্রে জাতিকে জাগিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পথ ধরে পুরো জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বপ্নের চুড়ান্ত লক্ষ্য, বিজয়ের স্বপ্নতরণে। বঙ্গবন্ধুর লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” মূলত তাঁর জীবন সংগ্রামেরই রোজনামচা।

তিনি কী ভাবতেন, কী স্বপ্ন দেখতেন, মানুষ হিসেবে, বাঙালি হিসেবে তার প্রতিকৃতি কী, এ স্মৃতিগ্রন্থে তা চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত নোট বইতে তিঁনি লিখে রেখেছিলেন-“As a man what concerns mankind, concerns me. As a Bengalee I am deeply involved in all that concerns Bengalees” অর্থাৎ মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতিই ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাবনায়, বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালির সাথে সম্পর্কিত, তাই বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। সাতই মার্চের সে বজ্রনির্ঘোষ মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস পুরো জাতিকে শক্তি আর সাহস যুগিয়েছে, দিয়েছে বিজয়ের অপ্রতিরোধ্য স্পৃহা।

আবার বিজয়ের পরে দেশে ফেরার পথে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তিনি জলদগম্ভীর কন্ঠে বলেছেন, “It was a journey from darkness to light, from captivity to freedom, from desolation to hope” “আমাদের এ যাত্রা অন্ধকার থেকে আলোর, নিরাশা থেকে আশার, স্থবিরতা থেকে গতিময়তার এবং বিন্দু থেকে বৃত্তের যাত্রা”।

এই গভীর বক্তব্যে দেশ ও জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা, স্বপ্ন ও পরিকল্পনার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়। পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যের দিকে অবিচল থেকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছার দৃঢ় প্রত্যয়ে তিনি বলেছিলেন “আমরা বাংলাদেশকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চাই”।

একথা অনস্বীকার্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি ধাপে রেখে গেছেন কালোত্তীর্ণ মুক্তিদর্শনের আলোকোজ্জ্বল পদরেখা। ন্যায়, সত্য সুন্দর ও মানবিকতার প্রতি অটল-অবিচল বাংলা ভূখন্ডের এই অবিসংবাদিত নেতা দেশ ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে একটি সমৃদ্ধ আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় জীবনের শেষ রক্তবিন্দুটিও বিসর্জন দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি।

মেঘ দিয়ে সুর্যকে যেমন ঢেকে রাখা যায় না, বঙ্গবন্ধুর অজেয় আদর্শ কে কখনো মুছে ফেলা যাবে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে- তিনি এক প্রোজ্জ্বল বাতিঘর, মুক্তির দিশারি, অবিনশ্বর আলোক শিখা।

লেখক : অতিরিক্ত ডিআইজি