আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
রবিবার, ২০ জুন, ২০২১   |   sonalisandwip.com
২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে সিগারেট খাতে নিন্মস্ল্যাবের সিগারেটের জন্য নীতি সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন

২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে সিগারেট খাতে নিন্মস্ল্যাবের সিগারেটের জন্য নীতি সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ঃ-

প্রথমেই, শতভাগ দেশীয়/লোকাল সিগারেট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন ২৫টি সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গঠিত এই কমিটি সিগারেট খাতে সরকারের কাছ থেকে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘোষিত ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবে সিগারেট খাতে দেশীয় মালিকানাধীন সিগারেট কোম্পানী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে দাবীকৃত নীতি সহায়তা হতে বঞ্চিত হয়েছে। তাই আজকের সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

২. অভ্যন্তরীন রাজস্বের সিংহভাগ আসে মূসক খাত হতে আর এই খাতে আহরিত মোট রাজস্বের ৩২%-৩৩% অর্থাৎ একতৃতীয়াংশ আসে সিগারেট খাত থেকে যার পরিমাণ প্রায় ৩২,০০০ কোটি টাকা । বর্তমানে দেশে শতভাগ দেশীয়/লোকাল মালিকানাধীন ২৫টি এবং ২টি বহুজাতিক কোম্পানী ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছে। বিগত ১০ বৎসর পূর্বে নিন্মস্ল্যাবে দেশীয় মালিকদের উৎপাদিত সিগারেটের বাজার হিস্যা ছিল ১০০% কেননা বহুজাতিক কোম্পানী নিন্মস্ল্যাবে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করত না।

৩. ফলে, তামাক ব্যবসার মাধ্যমেই দেশীয় তামাক শিল্প প্রাথমিকভাবে পুঁজি গঠন করে অন্যান্য রাজস্ব সঞ্চারী খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশকে শিল্পায়নের দিকে অগ্রযাত্রা করে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছিল নিন্মস্তরের সিগারেট উৎপাদন কেবল মাত্র দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর জন্য সংরক্ষিত থাকার কারণে। কিন্তু, অকর্ষাৎ BATB নামকরা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন- DERBY, PILOT, HOLLYWOOD, ROYALS ইত্যাদি নিন্মস্তরের দেশীয় সিগারেটের সমমূল্যে বাজারজাত করার কারণে দেশীয় সিগারেট বিরামহীনভাবে বাজার হিস্যা হারাতে থাকে। ফলে বর্তমানে তাদের বাজার হিস্যা ১০০% থেকে হ্রাস পেয়ে ১১% এ ঠেকেছে আর ইঅঞই’র হিস্যা শূণ্য থেকে ৮৯% বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র নিন্মস্ল্যাবের সিগারেট উৎপাদন করে থাকি। উচ্চস্ল্যাবের সিগারেট উৎপাদন করা সম্ভবপর হলেও এর বাজার ‣তরি করা অত্যন্ত দূরূহ কেননা এদেশের বাজার ঐতিহ্যগতভাবে বিদেশী নামি ব্র্যান্ডের দ্বারা আরুদ্ধ। এদেশের বাজারে সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে একটি বহুজাতিক কোম্পানি। আমরা দেখেছি তারা সবসময়ই মধ্যমান, উচচমান ও অতি উচ্চমানের সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করত। সুতরাং, নিন্মস্ল্যাবে আমাদের সাথে ব্যবসা করতে তেমন কোন শক্তিশালি প্রতিযোগী ছিল না। কিন্তু, ২০০৭-০৮ ইং অর্থবছর থেকে এই “বহুজাতিক কোম্পানী বিদেশী কিছু দামি ব্র্যান্ড ধারাবাহিকভাবে দেশের বাজারে লঞ্চ করে ব্যাপক এবং আগ্রাসী বিপনণ কর্মকান্ড চালিয়ে দেশীয় সকল কোম্পানীর বাজার দখল করে নিতে থাকে। ২০০৭-০৮ সালে এই বহুজাতিক কোম্পানীটি নিন্মস্ল্যাবে অপারেট করার পর থেকেই অধিকাংশ দেশীয় কোম্পানী অসম প্রতিযোগিতার কারনে বাজারে টিকতে না পেরে ক্রমন্বয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানী উৎপাদন ও বাজারজাত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের টিকে থাকা (Sustainability) ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপরন্তু, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের কারখানার উৎপাদন কমাতে কমাতে প্রাত্যহিক ভাবে উৎপাদন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় সময়ই কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

৫. দেশীয় মালিকদের সিগারেট কারখানার অবলুপ্তির কারণঃ

(ক) নীতিগত বৈষম্য ঃ  সরকারি নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে বৈষম্যর কারণেই একটি বিদেশী কোম্পানী কর্তৃক ক্রমাগত ভাবে নিন্মস্ল্যাবে একের পর এক বিদেশী উন্নত ব্র্যান্ড দেশে উৎপাদন এবং কম দামে বাজারজাত করার সুযোগ পেয়েছে। ফলে চরম বৈষম্যর শিকার হয়েছে দেশীয় উৎপাদকদের দেশীয় ব্র্যান্ড এবং হারিয়েছে কষ্টার্জিত মার্কেট। একটি বিদেশী কোম্পানী গত আট বছরের মধ্যে ৬টি ব্র্যান্ড নিন্মস্ল্যাবে বাজারজাত করে ৩টি ব্র্যান্ডের বাজারের অবস্থান শক্ত করে প্রায় ৮৯% মার্কেট শেয়ার অর্জন করেছে। 

(খ) Market Dominance Abuse ঃ এই বিদেশী কোম্পানী গত ৮/৯ বছরে একের পর এক বিদেশী নামি দামি ব্র্যান্ড দেশে নিন্মমানে উৎপাদন পূর্বক বাজারজাত করার জন্য “স্বজন, Partner Program এবং EC&C"- ইত্যাদির মাধ্যমে নগদ অর্থ, উপহার সামগ্রি এবং ইনসেনটিভ প্রদান করে “ ৭৮ হাজার আউটলেট বা দোকানে বিতরণ এবং তাদের প্রিমিয়াম এবং উচ্চ ব্র্যান্ডের সিগারেট নিলে নিন্মমানের সিগারেট নিতেই হবে" এমন পরিস্থিতি ‣তরি করে বাজারের আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণ করছে। সামগ্রিকভাবে তাদের বাজার হিস্যা প্রায় ৯০%।

৬. দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা ঃ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে তৎকালীন মাননীয় অর্থমন্ত্রী দেশীয় ব্র্যান্ড বিদেশী ব্র্যান্ডের সাথে সমমূল্যে প্রতিযোগিতা করে বাজারে বিক্রি করা যাবে না বুঝতে পেরে নি¤œাবের সিগারেটের জন্য দেশীয় এবং দেশের বাহিরে চলে বা চলত এমন নামিয় সিগারেট ব্র্যান্ডের জন্য দুইটি পৃথক মূল্য ও কর হার নির্ধারণ করে ছিলেন। দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই ইহা করা হয়েছিল। বাজেট ২০১৭-১৮ অনুযায়ী এনবিআর নিম্নরূপ ঝজঙ জারী করেঃ

(ক). সাধারণ আদেশ নং- ০৭/মূসক/২০১৭, তারিখ- ০১ জুন, ২০১৭।

(খ). বিশেষ আদেশ নং- ০৬/মূসক/২০১৭, তারিখ-০১ জুলাই, ২০১৭।

(গ). প্রজ্ঞাপণ নং- ০৮.০১.০০০০.০৬৮.১৬.০০১.১৭১৪-মূসক/২০১৭, তারিখ- ০৩ জুন, ২০১৭।

(ঘ). সাধারণ আদেশ নং- ১৫/মূসক/২০১৭, তারিখ- ০১ জুলাই, ২০১৭।

এছাড়াও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বােেজটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় মহান জাতীয় সংসদে ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে যে;

(১) দেশে ব্যবসায়রত বিদেশী তামাক কোম্পানীর আন্তর্জাতিক মানের উন্নতমানের সিগারেট শুধুমাত্র মধ্যম মূল্যস্তর এবং উচ্চ মূল্যস্তরেই উৎপাদন ও বিক্রয় করা যাবে;

(২) নিম্ন মূল্যস্তরে দেশীয় শিল্পের দেশীয় সিগারেট ব্র্যান্ড উৎপাদন ও বিক্রয় করবে অর্থাৎ এই স্ল্যাব শুধুমাত্র দেশীয় শিল্পের দেশী সিগারেট ব্র্যান্ডের জন্য থাকছে।

কিন্তু, উপরোক্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য অদ্যবধি কার্যকরী কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যার ফলে দেশীয় শিল্প এবং দেশীয় ব্র্যান্ড অরক্ষিত অবস্থায় আছে।

৭. দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন জরুরী ঃ একটি বিদেশী কোম্পানীকে একচেটিয়া সুবিধা না দিয়ে দেশীয় শিল্পকে রুগ্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। এই শিল্পে দেশীয় মালিকদের বিনিয়োগকৃত ১৫ হাজার কোটি টাকাসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রয়োজন। এই শিল্পে নূন্যতম ২,০০,০০০ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে যাদের কর্মসংস্থান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে যা থেকে উত্তোরণ দরকার। বিদেশী কোম্পানী তার অর্জিত মুনাফা বিদেশে নিয়ে যায় অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানী তার লাভ দেশেই অন্যান্য কর্মসংস্থানমুখী শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ করে। দেশীয় শিল্পের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণসহ কোম্পানীগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের আলোকে প্রথমে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এবং পরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেটে দুটি যুগোপযােগী সরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও নানবিধ অজানা কারণে তার বাস্তবায়ন আটকে আছে। এমতাবস্থায়, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থ বছরে নি¤œস্তরে দেশীয় সিগারেটের জন্য ইতোপূর্বে গৃহীত নি¤েœবর্ণিত প্রস্তাবনা/পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে যেটি উপযুক্ত মনে হয়, তা গ্রহণ করার জন্য দাবী পেশ করছিঃ

(ক) ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নি¤œস্তরে মূল্য বিভাজন সংক্রান্ত পদক্ষেপ অনুযায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকার দামের মধ্যে নূন্যতম ১ টাকা পার্থক্য করে দাম নির্ধারণ। অথবা, 

(খ) ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বর্তমান বাজারের নি¤œস্তরে বিক্রিত আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যস্তরে উন্নীত করে নি¤œস্তরে শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানীর দেশীয় সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখা।

৮. আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, প্রস্তাবনা/পদক্ষেপ (ক) বাস্তবায়িত হলে, চলতি বছরের সমপরিমাণ শলাকা বিক্রয় করে ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ খাতে প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ৩৪,২৮৭ কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ২২% বেশি।

অন্যদিকে, প্রস্তাবনা/পদক্ষেপ

(খ) বাস্তবায়িত হলে চলতি বছরের সমপরিমাণ শলাকা বিক্রয় করে ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ খাতে প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায়ের পরিমান দাড়াবে প্রায় ৩৯,৯৩৩ কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৩৮% বেশি।

৯. সিগারেট মার্কেটের বর্তমান হিস্যা (২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত) 

নাম                                            নিন্মস্তর            মধ্যমস্তর            উচ্চস্তর            অতি উচ্চস্তর

বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি            ৮৯%               ১০০%                ১০০%            ১০০%

দেশীয় সিগারেট কোম্পানি                 ১১%                     -                         -                 -

মোট                                             ১০০%             ১০০%                 ১০০%             ১০০%

মোট বাজার সাইজ বাৎসরিক = ৭৩ বিলিয়ন শলাকা। (১০০%) । বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানির বাজার হিস্যা = ৬৭ বিলিয়ন শলাকা। (৯২%)। দেশীয়/লোকাল সিগারেট কোম্পানি বাজার হিস্যা = ০৬ বিলিয়ন শলাকা। (০৮%)।

 ১০. পরিশেষে আমরা বলতে চাই যে, সরকার গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের বাজেটে স্থানীয় শিল্পকে তুলনামূলক বেশী সূরক্ষা দেয়া হয়েছে। বড় উদ্যেক্তা ক্সতরির জন্য গাড়ী শিল্প, গৃহস্থলীর ইলেক্ট্রিক পণ্য/হোম এপ্লায়ন্স, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প সহ বিবিধ খাতে দীর্ঘ মেয়াদী কর অবকাশের সুবিধা দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। দেশীয় শিল্প হিসাবে নি¤œস্ল্যাবে ব্যবসায়রত সিগারেট কোম্পানীগুলোকেও অনুরূপ সুবিধা দেয়া হলে এই খাতে দেশী উদ্যেক্তাদের হাজোর কোটি টাকা রাজস্ব প্রদানের সক্ষমতা গড়ে উঠবে, ফলে সরকার শুধুমাত্র একটি কোম্পানীর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে।

১১. অতএব আমাদের দাবী হল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী ৭ (ক) অথবা ৭ (খ) যে কোন একটি ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে দেশীয়/লোকাল সিগারেট কারখানাগুলোকেও অন্যান্য শিল্পের মত সাম্যতা ও ন্যায্য নীতি সহায়তা দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন শেষ করছি।

ধন্যবাদান্তে- LOCALLY OWNED CIGARETTE MANUFACTURER MALIK SAMITY