আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৯   |   sonalisandwip.com
বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রী পরিষদ

গত ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ বাংলাদেশের বিগত মন্ত্রী সভার পরিবর্তন হয় । বিগত মন্ত্রী পরিষদ আমাদের জনগণের কাছে তেমন আপত্তি করার কিছু ছিল না । যেহেতু কেউ সমালোচনায় আসেননি, সেহেতু সবাই নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ভাল ভাবেই পরিচালিত করেছেন বলেই ধরে নেয়া যায় । আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা, ত্যাগ ছিল বলেই আপনারা বিগত মন্ত্রীপরিষদ আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন । জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছি । সুতারাং আপনাদের ধন্যবাদ জানানো আমাদের উচিত । তাই আপনাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ রইল । আপনাদের কথা বাংলাদেশের মানুষ সরণ রাখবে । কারণ আপনাদের দায়িত্বে অনেক কল্যাণকর প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, অনেক প্রকল্প এগিয়ে গেছে যা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে । আবার অনেক প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছেন যা ভবিষ্যতে উদ্বোধন হবে এবং সম্পন্ন করে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ।

শুভেচ্ছা রইল নতুন মন্ত্রী পরিষদকে । অভিনন্দন নতুন মন্ত্রীদের দেশ সেবায় সুযোগ পাওয়ার জন্য আর অভিনন্দন পুরাতন মন্ত্রীদের যারা নতুনদের সুযোগ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন । গণতান্ত্রিক একটি দেশে এটাই নিয়ম । অপর দিকে প্রবীন এবং জ্ঞানীরা থাকতে নবীনরা দায়িত্ব বুঝে নেয়াই ভাল । তাহলে নিজেরা নিজেদের তৈরি করে নিতে সহজ হয় । যা একটি দেশের মন্ত্রী পরিষদের জন্য অবশ্যই কল্যাণ বয়ে আনবে । যিনি এই পরিষদের প্রধান তিনিই একান্ত কিংবা দলীয়ভাবে সার্বিক বিবেচনা করে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছেন । আমাদের বিশ্বাস এবারও মন্ত্রী পরিষদ বিগত মন্ত্রী পরিষদের মত নিষ্ঠা আর আন্তরিক হবেন । আপনাদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, ত্যাগই কেবল আমাদের দেশকে পূর্ববর্তী মন্ত্রী পরিষদের ন্যায় এগিয়ে নিয়ে যাবে । জাতি পূর্ববর্তী মন্ত্রী পরিষদের ন্যায় আপনাদেরও মনে রাখবে । আপনারাও জাতীর কাছে চির অম্লান হয়ে থাকুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

প্রবীণদের মন্ত্রী পরিষদে না থাকা নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিয়ে চলেছেন । যার হয়তো যুক্তি থাকতে পারে । কিন্তু তার বাইরে কি যুক্তি নেই ? নিশ্চয় আছে । নবীনদের যদি দায়িত্ব দেয়া না হয় তবে দেশ কিভাবে চলবে ? কারণ পৃথিবীর নিয়মে প্রত্যেককেই এক সময় বিদায় নিতে হবে । একটি পরিবারের দায়িত্বও প্রবীন থেকে নবীনের হাতে দিতে হয়, তাহলে দেশ বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কেন প্রবীনের সাথে নবীনদের হাতে দেয়া হবে না । তাঁদের দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে । তাই আমাদের বিশ্বাস তাঁদের উদ্যম আর গতি দিয়ে মন্ত্রণালয়কে গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন । অপর দিকে যে সমস্ত প্রবীন ব্যক্তিবর্গ মন্ত্রণালয় থেকে সরে গেছেন, তাঁদের জীবদ্দশায় নবীনদের প্রেরনা, দিক নির্দেশনা দিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে । সুতারাং মন্ত্রী পরিষদে স্থান পাওয়া নবীন মন্ত্রীগন নিশ্চয় আমাদের চমক দেখাতে পারবেন ।

গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেছে গণতান্ত্রিক ধারাকে অনুসরণ করে । সেখানে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ নিয়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিপক্ষ ছিল । তা নিয়ে দল মত হিসাবে জোট/ রাজনীতিকগন নির্বাচন করেছেন । কেউ বিজয়ী হয়েছেন, কেউ পরাজিত হয়েছেন । এমনি করে আমাদের দেশের রাজনীতির পালা বদল ঘটে । সেখানে আমরা জনগণ একেকজন ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতা, কর্মী কিংবা সমর্থক ছিলাম । কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষ । সুতারাং নির্বাচন শেষে দল আর মতের কোন ভিন্নতা মনে রাখা উচিত নয় । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর সমগ্র বাংলাদেশকে পরিচালনা করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই সরকার গঠন করতে হবে এটাই স্বাভাবিক । আর যখনই সরকার গঠন হয়ে যায় তখন সরকার আর আওয়ামী লীগের থাকে না, সরকার হয়ে যায় সমগ্র বাংলাদেশের । ভিন্ন ভিন্ন মত আর আদর্শের মানুষগুলো যেহেতু বাংলাদেশের, সুতারাং বাংলাদেশের সরকার তাদেরও সরকার ।

সরকারের পরিষদে থাকা সদস্যদের শপথ বাক্যে “আমরা অনুরাগ কিংবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন অন্যায় করব না” এমন কথা শিকার করতে হয় । তাহলে সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে সমর্থকদের প্রতি যেমন অনুরাগী হওয়া যাবে না, তেমনি বিরোধীদের প্রতিও বিরাগী হওয়া যাবে না । আমাদের সরকারের শপথ বাক্যেও এমন কথাই উচ্চারিত হয়ে থাকে, সংবিধানেও তেমন উল্লেখ রয়েছে । সরকার যে দলেরই হোক তার দায়িত্ব যেমন সকল বাংলাদেশীদের কল্যাণ করা তেমনি সকল বাংলাদেশীদেরও সরকারের উপর সমান অধিকার বিরাজ করে । সরকারে থেকে একজন সরকার প্রতিনিধির কোন সুযোগ থাকে না যে, তিনি কারও উপর পক্ষপাত কিংবা বিরাগ ভাজন হতে পারেন । আমাদের আপামর জনসাধারণের বিশ্বাস আমাদের বর্তমান নতুন মন্ত্রী পরিষদ তথা সরকারও তেমনি কারও প্রতি অনুরাগী কিংবা বিরাগী হবেন না ।

নবীন আর প্রবীনের সংমিশ্রণে গঠিত আমাদের মন্ত্রী পরিষদ নিজেদের সকল মেধা, মনন, শ্রম, ত্যাগ আর নিষ্ঠা দিয়ে আমাদের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন । আমাদের নতুন মন্ত্রী পরিষদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, সকলের কল্যাণের জন্য যা বর্জন করা উচিত তা যেন আমাদের আইনে স্থান না পায়, আর যা অর্জন করা উচিত তা থেকে যেন বাংলাদেশ বঞ্ছিত না হয় । আপনাদের সামনে রয়েছেন আমাদের বিচক্ষন প্রবীনগন চাইলে যাদের কাছ থেকে আপনাদের সু-পরামর্শ নিতে পারেন । মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে হাঁটছে । আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশের এখন এগিয়ে যাওয়ার সময় । এমন সময় আপনাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে ।

আশা করি আমরা সাধারণ জনগণ তা আপনাদের কাছে থেকে পাব । শুভেচ্ছা রইল বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রী পরিষদকে, মন্ত্রী পরিষদের প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে ।

আকতারুজ্জামান মোহাম্মদ মোহসীন

সাহিত্যিক ও সমসাময়িক লেখক