আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ০৮:২২ অপরাহ্ন
শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮   |   sonalisandwip.com
সী-এম্বুলেন্স ! সরকারিকা মাল দরিয়ামে ঢাল

। । . এম এ হাশেম আকাশ । ।

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সাথে মূল ভূখন্ডের নদীপথে যাতায়াতের সমস্যার কথা চিন্তা করে অসুস্থ্য রোগী পরিবহনের সুবিধার্থে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দেয়া প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা দামের সী-এম্বুলেন্স এবং ২০১৫ সালে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে দেয়া প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা দামের এম্বুলেন্স দুটো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে আছে।

চালক ও জ্বালানি সরবরাহ না দেয়ায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বিপুল অর্থের রাষ্ট্রীয় যান দুটো পড়ে থাকতে থাকতে অকেজো হওয়ার পথে যা একাধিকবার বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু কারো টনক নড়েনি। যাতায়াতের দুর্ভোগের নিত্য শিকার সন্দ্বীপের রোগী পরিবহনে সরকারের এ পদক্ষেপটি ছিল যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত।

বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী এবং সন্তান সম্ভবা মায়েদের যন্ত্রণা লাঘবে এটি খুবই কার্যকরি একটি পদক্ষেপ হতে পারত। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার উভয়েয় রিপোর্টারকে বলেছেন, মন্ত্রনালয় থেকে চালক ও জ্বালানি না পাওয়ায় ওগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এখানে দু’টো বিষয় গুরুত্বপূর্ণঃ প্রথমতঃ মন্ত্রণালয় যদি এগুলোর চালক ও জ্বালানি সরবরাহ করবেই না তবে সী-এম্বুলেন্সগুলো সরবরাহ করে সরকারের কোটি টাকা জলে ফেলার মানে কী?

বিশেষত স্থানীয় প্রশাসন থেকে বার বার পত্র দেয়ার পরেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা না দেয়ার বিষয়টি অনভিপ্রেত। যদি চালক ও জ্বালানি সরবরাহ করার সুযোগ না থাকে, তবে স্থানীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেগুলো ম্যানেজ করে রাস্ট্রীয় সম্পদগুলো কাজে লাগানোর নির্দেশনা কি দেয়া যেত না?

আমাদের দেশে একটা কথা আছে, ‘সরকারিকা মাল দরিয়ামে ঢাল’। এ প্রবাদকে শতভাগ সত্যে পরিণত করার জন্যই কি এমন ব্যবস্থা?

দ্বিতীয়তঃ স্থানীয় প্রশাসন শুধু মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করলো। তাদের কি এর বাইরে করার কিছুই ছিল না? মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রশাসন উর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় এগুলোকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিল না কেন?

রোগীদের থেকে জ্বালানি খরচ আদায় করা যেত। আউট সোর্সিং হিসেবে পার্ট টাইম চালক নিয়োগ করে স্থানীয় সোর্স থেকে অর্থের ব্যবস্থা করে চালকের বেতন দেয়া অসম্ভব ছিল না।

এমনকি বিত্তশালীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে অনুদানের মাধ্যমেও একজন চালক রাখা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়।উপজেলার মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করা যেত।

বিশেষত জনপ্রতিনিধিরা জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নিলে তাতে সহযোগিতার অভাব হয় না। তাছাড়া আন্তরিকতার সাথে তদবির করলে মন্ত্রণালয় থেকে জ্বালানি ও চালক পাওয়াও খুব কঠিন বিষয় নয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের বর্তমান মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় একজন সৎ, সাহসী ও উদ্যমী কর্মকর্তা হিসেবে সুখ্যাত। সরকারের উর্ধ্বতন মহলে উনার যথেষ্ট প্রভাব আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমৈ স্থানীয় প্রশাসন তার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ ও তাঁর সহযোগিতা নিতে পারলেও সমস্যাটি দ্রুত সমাধান সম্ভব হতে পারে।সংসদ সদস্য মহোদয় ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীমহোদয়ের নজরে আনলেও ব্যাপারটির একটি আসু সমাধান মিলতে পারে।

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনরাও এসব বিষয়ে আরো বেশি জ্ঞান রাখেন। অভাবটা হলো আন্তরিকতার।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিবেন এবং মন্ত্রণালয়গুলো সরকারি কোটি টাকার সম্পদকে নষ্ট হতে না দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেগুলোকে কাজে লাগানোর তড়িৎ ব্যবস্থা নিবেন সেটাই প্রত্যাশা।