আজ সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন
শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩   |   sonalisandwip.com
অর্থবছরের প্রথম ২০ দিনেই ব্যাংক থেকে সরকারের ধার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থবছরের প্রথম ২০ দিনেই সরকার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। আর বিদায়ী অর্থবছর পর্যন্ত নিয়েছে ৪ লাখ ৮৩০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই নেওয়া হয় ১ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ে তা ছিল ৬২ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। সরকার অবশ্য ধারের টাকা থেকে আগের বছরগুলোর ধারের কিছু শোধও করে থাকে।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়া এবং সঞ্চয়পত্রের আগের ঋণ পরিশোধ করতে হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দিক থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ভর করতে হচ্ছে সরকারকে। এতে বছরের প্রথম দিক থেকেই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে নতুন করে ঋণ নিতে হয়েছে। আবার বেশির ভাগ ঋণেরই জোগান এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্বমেন্ট ফান্ড (নতুন টাকার জোগান) থেকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইতিপূর্বে একই অর্থবছরে ডিভল্বমেন্ট করে সরকারকে এত বেশি ঋণ কখনো দেওয়া হয়নি। ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকটের কারণে চলতি অর্থবছর ডিভল্বমেন্টের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া বেড়েছে। এ বিষয়ে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা অর্থনীতির ওপর খারাপ প্রভাব তৈরি করবে। সরকার চলতি অর্থবছর সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাপানোর চিন্তা করছে। এ জন্য তারা এভাবে ঋণ নিচ্ছে। তিনি বলেন, এতে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হলেও তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আরও খারাপ হবে।

জানা যায়, সরকার প্রতি রোববার ট্রেজারি বিল এবং মঙ্গলবার বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের জন্য নিলামের ব্যবস্থা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিলামে বন্ড বা বিল কিনতে ব্যর্থ হলে তা ডিভল্বমেন্ট করা হয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন টাকার রিজার্ভ থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিভল্বমেন্ট ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৫৩ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক অর্থবছরে সরকার টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে ১৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকার জোগান দেওয়ার তথ্যটি অস্বীকার করলেও নতুন টাকা ছাপানোর তথ্য গোপন থাকছে না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২২ সালের মে মাসে দেশে মোট ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬১ কোটি। গত মে মাসে তা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাজারে জোগান বেড়েছে ৪৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি অবলম্বন করছে, তাতে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারের উচিত মেগা প্রকল্প, বিদেশ ভ্রমণের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় কমানো। তা না করলে টাকা ছাপানো বন্ধ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব হবে না। আর খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।