আজ সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩   |   sonalisandwip.com
ছাত্র আন্দোলন , মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ও রোকেয়া হলের চালচিত্র : সেলিনা চৌধুরী

(প্রথমপর্ব)

৬৯ এর এর গণ আন্দোলন ,মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের তৎকালীন ছাত্রীদের সম্পর্কে গণ মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। কোন কোন লেখকের সংগ্রহীত লেখনীর মাধ্যমে ঘটনা অতিরঞ্জিত ও পল্লবীত হয়ে শাখা প্রশাখায় বিস্তারলাভ করেছে।

ইদানিং ফেসবুকে ও কিছু কিছু অতিরঞ্জিত বর্ণনা চোখে পড়েছে। অনেক ছাত্রী ও পরিচিত জন এ বিষয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। কেননা রোকেয়া হলের সঙ্গে আমার প্রায় ৪৩ বছরের পরিচয়। এ পরিচয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রাক্তনী হিসাবে। সুতরাং ঘটনা দুর্ঘটনা নিয়ে আলোকপাত করার একটি দায়িত্ব অনুভব করছি।

 

দ্বিতীয় পর্ব

গোড়ার কথা : ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রীদের ভর্তির কোন ব্যবস্থা ছিল না। বেথুন থেকে বিএ পাস করে আসা লীলা নাগ তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর পিজে হার্টগ এর বিশেষ অনুমতি নিয়ে. ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্সে ভর্তি হন।লীলা নাগ ইংরেজি সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাশ করেন।পরবর্তীকালে বিপ্লবী লীলা রায়ের (নাগ) কর্মকাণ্ড কিংবদন্তি তুল্য হয়েছিল । তিনি সমাজ সংগঠক ও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন।একথা বললে অতিকথন হবেনা বোধহয় লীলা রায়ের মতো বহুধা প্রতিভাবান ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসে আর একজনকেও পাওয়া যায়নি।

এবার রোকেয়া হলের আবাসন প্রক্রিয়ার কথা বলা যাক।পরবর্তীতে যখন ১০-১২ জন ছাত্রীর ভর্তি হয় ,তখন আবাসনের প্রয়োজন পড়ে ।

প্রথমে চামেরি হাউস,/ চামেলি হাউজ, হু দা হাউজে (1926_39) ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা হয়। পরে ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত উইমেন্স হল নামে ছাত্রী হোস্টেল হয়। এ সময় ছাত্রদের হলের সঙ্গে অফিসিয়াল কাজকর্ম সম্পন্ন হতো।পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে এই উইমেন্স হল পূর্ণাঙ্গ হলে রূপান্তরিত হয়। উইমেন্স হলে ফুল টাইম প্রভোস্টও আবাসিক শিক্ষক নিয়োজিত হয়।

১৯৬৪ সালের এই উইমেন্স হলের আবার নাম পরিবর্তিত হয়ে রোকেয়া হল নামাঙ্কিত হয়।রোকেয়া হলের প্রথম প্রোভোস্ট ছিলেন অধ্যাপক আখতার ইমাম। অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হলো, ফুল টাইম হাউস টিউটর নিয়োজিত হল! এরপর রোকেয়া হলে ছাত্রী সংসদ হলো, ডাকসুতে ছাত্রী প্রতিনিধিত্ব হলো, সুপর্ণা নামে একটি বার্ষিক ম্যাগাজিন ও প্রকাশিত হলো।

১৯৬৫-৬৬ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন হলের ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ছয়শত জন। আবাসন ব্যবস্থা ছিল চারটি বিল্ডিংএ স্টাফ কোয়ার্টার, অনার্স ভবন, চামেলি হাউজ ও প্রধান ভবন। সে সময় ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রীরা ও সম্পৃক্ত ছিল। দলগুলির মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন )। তখন এন এস এফ নামে একটি সরকারি সন্ত্রাসী দল ছিল কিন্তু রোকেয়া হলে এ দলের কেউ ছিল বলে শুনিনি।

 

তৃতীয় পর্ব

তখনকার ছাত্র রাজনীতি ছিল মূলত ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা সম্পৃক্ত।সে সময়ে যেসব নারী নেত্রীরা সাড়া জাগিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, লীলা রায়, নাদেরা চৌধুরী, অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী, মাফুজা খানম, মালেকা বেগম, রাফিয়া আক্তার ডলি, মমতাজ বেগম, আয়েশা খানম, সৈয়দা মনিরা আক্তার, দীপা দত্ত, লুৎফুন নাহার বিউটি, রাশেদা খান রিনা, রোকেয়া সুলতানা রাকা, আভা মন্ডল, সৈয়দা রোকেয়া খানম, ফোরকান বেগম, সাইমা জাহান পাপড়ি প্রমূখ।

হলের বিভিন্ন কার্যক্রম ছাত্রী সংসদ প্রভোস্ট ও আবাসিক-শিক্ষিকাদের সহায়তায় পরিচালিত হতো। হল সংসদে প্রধানত: ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপের প্রাধান্য ছিল। অবশ্য আশির দশকে জাতীয় ছাত্রদল ও ৯০ এর দশকে এরশাদ পন্থী ছাত্রদল কিছুটা প্রাধান্য বিস্তার করেছিল যদিও দুই একবার মিশ্র ছাত্রী সংসদও গঠিত হয়েছিল।

 

চতুর্থ পর্ব

ভাষা আন্দোলনের উইমেন্স হলের ছাত্রীরা: ঢাবির ছাত্রীরা মেধায় মননে ছাত্রদের সমকক্ষ ছিল তো বটেই একই সাথে তারা রাজনৈতিক আন্দোলনে ছাত্রদের সহযাত্রীও ছিল। ভাষা আন্দোলনে যেসব ভাষা কন্যাদের অবদানের কথা জানতে পারি তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাষা কন্যা হালিমা খাতুন, রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া খান, তালেয়া রহমান, সুফিয়া আহমেদ, ডক্টর সাফিয়া খাতুন, জহরত আরা, কামরুন্নাহার লাইলি ও প্রতিভা মুৎসুদ্দি প্রমুখ।

ভাষা আন্দোলনে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর কারা বরণের কথাও জানা যায়। পাকিস্তান আমলে হলের কঠোর নিয়ম কানুন মেনে তারা ভোর ছয়টায় কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে খালি পায়ে প্রভাত ফেরি করতো। তাদের হাতে থাকতো পুষ্পার্ঘ্য, হৃদয়ে থাকতো দৃঢ়তা, মুখে থাকত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। শত পুলিশি বাধা তাদেরকে রুখতে পারেনি, অকুতোভয় আমাদের এইসব পূর্বসূরীদের প্রণতি জানাই।

পঞ্চম পর্ব

ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ : ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল অভাবিত।সে যুগে সামাজিক মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্ক ছিল অতি নাজুক।কিন্তু ভাষা আন্দোলনে তাদের সে সম্পর্ক বাধা হয়নি। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।প্রথমত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের শাহাদাত বরণ। দ্বিতীয় ধাপে ১৯৫২ থেকে ৫৬ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের সংগ্রাম ও কারাবরণ।দ্বিতীয় ধাপটি যদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কেন জানিনা ছাত্রীদের কারাবরণের ইতিহাস প্রায় অজানায় রয়ে গেছে। এ সময় ছাত্রীরা স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে প্রতিবাদী হয়ে কারা বরণ করে। প্রায় সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কতটা বেগবান অপ্রতিরোধ্য ও সফলতা লাভ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও সে আন্দোলনের অর্জন আমরা সবাই অবগত। আমরা এও জানি যে সে আন্দোলনের গুরুত্ব প্রায় ষাট বছর পরে পৃথিবীকে কিভাবে আলোড়িত করেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এখন জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।এই স্বীকৃতি ভাষা আন্দোলনের একটি গৌরবময় অধ্যায়ও বটে।

ষষ্ঠ পর্ব

১৯৫৫ থেকে ৫৬সালে ভাষা আন্দোলনের ক্রমধারা : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নানা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে বিকশিত হতে থাকে।নানা ধরনের লেখনীতে কবিতায় সংগীতে ভাষার আবশ্যিকতা গণমানুষের মর্ম মূলে পৌঁছে যায়।একই সাথে ছাত্রদের আন্দোলন মশালের আগুনের মতো সবার প্রাণে ছড়িয়ে যায়।কালের যাত্রাধনি প্রবাহমান ও বেগবান।তাই ১৯৫৫ সালের দ্বিতীয় ধাপটি ছিল অত্যন্ত শক্তিময়তার পরিচয়ক।

সপ্তম পর্ব

৬৯ এর গণ আন্দোলন ও সত্তরের নির্বাচন : ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল ফুটন্ত আগ্নেয়গিরির মতো।ফিল্ড মার্শাল আইব খানের কুখ্যাত কালো দশকে (1958-68)নানা বৈষম্যের শিকার হয়ে ছাত্র জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলি ফুসে উঠেছিল।এ সময় ডাকসুর ভিপি ছিলেন তোফায়েল আহমেদ ও জি এস ছিলেন নাজিম কামরান চৌধুরী।রকেয়া হলের ভিপি ছিলেন আয়েশা খানম ও জিএস ছিলেন রাশেদা খানম রিনা ।

সে সময় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল ছয় দফা,শেখ মুজিবুর রহমানের উপরে আরোপিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার,ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদি।

ছাত্ররা ১১ দফা দাবি প্রণয়ন করে সর্বদলীয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিল। একই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি আইয়ুব খানের অধীনে নির্বাচন নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সরকার কারফিউর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ সময়কার কারফিউর একটি চিত্র তুলে ধরার লোভ সংবরণ করতে পারছি না।ঢাবির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল দৃশ্যপট ছিল কলা ভবন প্রাঙ্গণ।রোকেয়া হলে ৫তলা ভবন থেকে কলা ভবনের সকল কর্মকাণ্ড আমরা দেখতে পেতাম।দেখতাম প্রায় শ'খানেক মিলিটারি সৈনিক কলা ভবনের ছাদ,কলাভবন প্রাঙ্গণেএবং আরো সখানেক কলা ভবনের উল্টোদিকে রোকেয়া হলের দেওয়াল ঘেঁষে এটেনশন ভঙ্গিতে হাতে আগ্নেয়াস্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ।তাদের মুখ ভাবলেস হীন। এর আগে পুলিশ দেখেছি,পুলিশ ছাত্রদের পিছনে দৌড়াচ্ছে, আর ছাত্ররা স্লোগান দিচ্ছে পুলিশ তুমি বিচার কর বেতন তোমার ১১২, পুলিশ কখনো হাসছে বা কখনো লাঠি পেটাচ্ছে ,মিলিটারির এই চিত্রারপিত স্ট্যাচুএই প্রথম দেখলাম।

একটানা পকারফিউ চলছে,হলে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছি,২ /১ ঘন্টার জন্য কারফিউ শিথিল হয় তখন একটু বাইরে রাস্তায় ঘুরতে বেরোই।সেখানেও মজা ছিল ,হলের নিয়ম অনুযায়ী গেট দিয়ে বেরোলেই খাতায় লিখে বেরোতে হয়,আমাদের নেপালি দারোয়ান নমী ছিল অত্যন্ত কড. া বেরোতে গেলেই সে বলতো,দিদি খাত্তামে লিখ্খা হায়?অগত্যা দশ পনের মিনিটের হাওয়া গায়ে লাগানোর জন্য খাতায় লিখে বের হতাম।

অবশ্য বেশিদিন এই দৃশ্য চললোনা, ছাত্রীরা দেওয়ালের উপর দিয়ে সৈন্যদের ইট পাটকেল ছুরতে লাগলো,রান্না ঘরের দাদীরা ভাতের মার পানি ইত্যাদি গায়ে ফেলতে লাগলো। এভাবে প্রতিবাদ প্রতিরোধে দেশ ফুসে উঠলো। পরবর্তীতে ছাত্ররা কারফিউম ভেঙে মিছিল বের করল,শিক্ষক বুদ্ধিজীবীও জনতা ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করল।৬৯এর ২০ জানুয়ারি এই আন্দোলনের একটি মাইলফলক ,ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বেএকটি সমাবেশ হয় এতে শত শত ছাত্র জনতা অংশ নেয়।সংক্ষিপ্ত ভাষণের পরে বেলা বারোটার দিকে তারা কারফিউ ভঙ্গ করে একটি মিছিল বের করে সেই মিছিলের অগ্রভাগে শত শত ছাত্রী সামিল হয়েছিল। সেই মিছিলে আইন বিভাগে পড়ুয়া ছাত্র আসাদুজ্জামান পুলিশের গুলিতে আহত হন, পরে মারা যান। আসাদের মৃত্যুতে ছাত্ররা বজ্র কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হয় ।ছত্রভঙ্গ ও ছাত্র ছাত্রীরা হলে ফিরে আসে,রোকেয়া হলে আসাদের এক বোন থাকতো

তার কান্না ও আহাজারিতে হলের সব ছাত্রীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। ছাত্রীরা শপথ নিল,আর শোক নয় আসাদের অসমাপ্ত কাজ আমাদের শেষ করতে হবে।বিকালে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের হয়,সে মিছিলে রোকেয়া হলের প্রতিটি ছাত্রী অংশ নিয়েছিল কেউ ঘরে ছিল না।হলে প্রতিবাদী ক্রুদ্ধ প্রায় সাত শত ছাত্রী অংশ নিয়েছিল।ছাত্র-ছাত্রীরা মৌন মিছিলে শহীদ মিনারে জমায়েত হয়।তাদের অগ্রভাগে আসাদের রক্ত রঞ্জিত শার্ট পতাকা হিসেবে পতপত করে উড়ছিল।এই পতাকা বুদ্ধিজীবী,

শিক্ষক, জনতাকে তুমুল ভাবে আলোড়িত করেছিল। সৃষ্টি হয় শামসুর রহমানের অমর কবিতা আসাদের শার্ট।

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্ত কবরির মতো কিংবা জ্বলন্ত মেঘের মতোআসাদের শার্ট উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়----------

আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা । ।

এই আন্দোলন আরো অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠে স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর শামসুজজোর শাহাদাত বরণের মাঝে।

আইয়ুব খানের শাসনের ভিত ধসে পড়ে।২৫ শে মার্চ আইয়ুব খান তার শাসনতন্ত্র ওপরিষদ বাতিল করে জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়খানের কাছে ক্ষমতায় হস্তান্তর করেন। সারাদেশে আবার সামরিক শাসন জারি করা হয়।৩১ মার্চ ইয়াহিয়া খান সামরিক প্রশাসক থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়ে যান।এরপর ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন ।এই সময় আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন।দল মত নির্বিশেষে সকলে উপলব্ধি করে যে পূর্ব পাকিস্তানের এই অপশাসন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করা।সুতরাং সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।সেই উপলব্ধিতে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় এবং এইভাবে জেনারেল ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সকল আশা উৎপাটিত হয়।৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচনে দল মত নির্বিশেষে সকলের একাত্মতা বহিঃ বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল।এই ঐক্য,প্রতিবাদ প্রতিরোধ মনে করিয়ে দিচ্ছিল কিশোর কবি সুকান্তের অবিনশ্বর কবিতাটি--++++

বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে,

আমি যাই তারি দিনপঞ্জিকা লিখে,

এত বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ,

চারিদিকে উঠে অবাধ্যতার ঢেউ।

অষ্টম পর্ব

অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ এর মার্চ :  অসহযোগ আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ধাপ বলা যায়!নির্বাচন উত্তর সময়ে পাকিস্তানের শাসকদের কুটচালের মাঝে মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়! মার্চের প্রতিটি দিন-রাত্রি ছিল টানটান উত্তেজনায় উত্তপ্ত! ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করল তখন প্রতিটি ছাত্র সংগঠন গর্জে উঠলো!সে সময় ডাকসুর ভিপি ও জিএস ছিলেন যথাক্রমে আ স ম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন এবং রোকেয়া হলের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন আয়েশা খানম ও জিএস ছিলেন রাশেদা খানম রিনা!৬৯ এর গণ আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন আমার ছাত্রীত্ব কালে ঘটেছিল সুতরাং আমি সবকিছু নিজে দেখেছিও শুনেছি!তবে এখানে আমি আব্দুর রবের একটি লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি!তার কথায়,-"১৯৭০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বাহিনীর প্রধান হিসেবে আমি সামরিক কায়দায় এই পতাকা তুলে দেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে!এর আগে এই পতাকা নিয়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে নিউক্লিয়াসপন্থি ছাত্রলীগের মিলিট্যান্ট বাহিনী বলে পরিচিত জয় বাংলা বাহিনী!আমি ছিলাম এই বাহিনীর প্রধান এবং উপপ্রধান ছিলেন কামরুল আলম খান খসরু! জঙ্গি ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনী এর প্রীতিলতা ছাত্রীবাহিনী গড়ে তোলা হয়। এর প্রধান ছিলেন প্রয়াত মমতাজ বেগম।

এক মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র জনতার বিপুল সমাবেশ শেষে পাকিস্তানি পতাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং আব্দুর রব ডাকসুর প্রধান হিসাবে কলা ভবনের গাড়ি বারান্দার শীর্ষে বাংলাদেশের নতুন পতাকা উত্তোলন করেন। তার পাশে ছিল আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ ও নূরে আলম সিদ্দিকী। এই চারজনকে তখন ছাত্রসমাজ চার খলিফা বলে ডাকতো।

পরবর্তীতে ডাকসুর ভিপি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির একটি বর্ণনায় দেখা যায়,-----মহা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় সত্তরের নির্বাচনের পর একাত্তরে শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি।মনোটেভ ককটেল ,হাই এক্সক্লুসিভ ইত্যাদি তৈরীর কাজে প্রস্তুত হতে থাকে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্রইউনিয়ন অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ শুরু করে।মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাইফেল কাঁধে এক বিরাট বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ থেকে বের হয়ে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলি প্রদক্ষিণ করে।এতে ছাত্রী ব্রিগেড ও ছিল এই দলের নেতৃত্ব দেয় রোকেয়া হলের জিএস সৈয়দা রোকেয়া খানম।তার সঙ্গীদের মধ্যে ছিল ,----+রাকা,আভা,মিনু ,নিনু, নিনিসহ আরো অনেকে।

নবম পর্ব

৭ই মার্চের ভাষণ : তৎকালীন রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর আমরা সবাই হলে ফিরে আসলাম। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে বলে হলের সব ছাত্রীকে অভিভাবকের বাড়িতে চলে যেতে বলা হলো। যাদের যাওয়ার ভাড়ার দরকার হলো হল ফান্ড থেকে তা দিয়ে দেওয়া হল। এইভাবে ছাত্রীরা সবাই হল ত্যাগ করেছিল। ২৫ শে মার্চ রাতে হলে শুধু সাতজন ছাত্রী ছিল।

তারা হলো_---‐-' এক খুরশিদা বেগম অনার্স দ্বিতীয় পর্ব. দুই লুৎফুল নাহার খান এম এ পরীক্ষার্থী তিন নাজমা বেগম এমএ পরীক্ষার্থী। চার রাধা সেরেস্তা নেপালি এমএ পরীক্ষার্থী। পাঁচ আক্তার ইমাম সেফাতুন্নেসা পরীক্ষার্থী। ছয় ফরিদা খানম সাকি। সাত মমতাজ বেগম তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষার্থী।

অধ্যক্ষা আক্তার ইমাম তার রোকেয়া হলে বিশ বছর গ্রন্থে এই সাতটি ছাত্রীর উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো লিখেছেন ঐ সাত জন ছাত্রীকে আবাসিক শিক্ষিকা ছায়রা খাতুনের বাসার স্টোর রুম তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ২৭ তারিখ কারফিউ শিথিল হলে ওইসব ছাত্রীদের তাদের অভিভাবকেরা নিয়ে যায়।নেপালি ছাত্রীকে নেপাল এমবেসির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হলের নিয়ম অনুযায়ী চিঠি দিয়ে এম্বেসি তে নিয়ে যায়।

২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট

পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার অন্তরালে পূর্ব পাকিস্তানের উপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার পর সামরিক বাহিনী আক্রমণ করে রাজার বাগ পুলিশ লাইন বিডিআর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল জগন্নাথ হল রোকেয়া হল ও শিক্ষকদের কোয়াটারে।

রোকেয়া হলের অধ্যক্ষা আক্তার ইমামের বর্ণনা অনুযায়ী ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার পর সামরিক বাহিনীর লোকজন হলের গেট ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করে তারা ছাত্রীরা কোথায় আছে সেটা জানতে চায়। সারা ক্যাম্পাস তখন আক্রান্ত। গোলাগুলি হচ্ছে অনবরত মর্টার এর শব্দ হচ্ছে সারা ক্যাম্পাস সার্চ লাইটে এর আলোয় আলোকিত। সামরিক বাহিনীর আরেকটি দল অধ্যক্ষের কোয়াটারের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। অধ্যক্ষের বাংলায় তখন অবস্থান করছিল সুপার জাহানারা বেগম আবাসিক শিক্ষক সাহেরা খাতুন নাইটগার্ড আরো কিছু কর্মচারী। তারা সারা বাড়ির তল্লাশি চালায় বাথরুম থেকেও পলাতক কাউকে বের করে নিয়ে আসে ।তারা ছাত্রীদের খোঁজে জানতে চায় ছাত্রীরা কোথায়? অধ্যক্ষা বলেন ছাত্রীরা সব হল ত্যাগ করেছে তারা তার কথা বিশ্বাস করে না উপস্থিত সকলকে লাইনে দাঁড় করায় ও বন্দুকের গুলি তাক করে। আক্তার ইমাম তার কর্মচারীদের বাঁচাতে দু হাত দিয়ে আগলে রাখে ও কাকুতি মিনতি করে তাদের প্রাণ ভিক্ষা চায়। তারা দু একজনকে বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করে কাউকে বা লাথি মারে শেষ পর্যন্ত আক্তার ইমামকে বন্দুকের নল দিয়ে হাতে প্রচন্ড আঘাত করে বেরিয়ে যায়। এইভাবে তারা বাংলায় দুবার প্রবেশ করে ও তল্লাশি চালায় ,শেষবার কিছু মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা আবাসিক শিক্ষকদের কোয়াটারে প্রবেশ করে সেটা ছিল সুপার জাহানারা বেগমের কোয়াটার তার সামরিক অফিসার পুত্রের দেয়ালে টাঙ্গানো ছবি দেখে আর তল্লাশি না চালায়ে বের হয়ে যায় তার পাশের ফ্ল্যাটে ছিল হাউস টিউটর সাহেরা খাতুনের স্টোর রুমে তালা মারা ৭ জন হলের ছাত্রী। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে তাদের প্রাণ রক্ষা হয়।

দশম পর্ব

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ও অবরুদ্ধ বাংলাদেশ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়কার ছাত্রী, প্রাক্তন ছাত্রী ও ভবিষ্যতের ছাত্রীরা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। একদল ছাত্রী ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নেয় ,অন্য একটি দল দেশের অভ্যন্তরের থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দান করে।

এদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মতিয়া চৌধুরী মালেকা বেগম মাহফুজা খান আয়েশা খানম, রাফিয়া আক্তার ডলি এডভোকেট মমতাজ বেগম ফোরকান বেগম ফরিদা আক্তার সাকি ,রাশেদা খান রিনা সৈয়দা মনিরা আক্তার, ডাক্তার মাখদুমা নার্গিস ডাক্তার ফৌজিয়া মুসলিম ,,অ্যারোমা দত্ত ,বেবি মওদুদ ও আরো অনেকে।

অবরুদ্ধ দেশে রোকেয়া হলের পরিস্থিতি।

আগস্ট থেকে নভেম্বর ১৯৭১

আমি এখানে অধ্যক্ষা আক্তার ইমামের একাত্তরের পঁচিশে মার্চ ও কিছু ঘটনা নামক বইটি অনুসরণ করছি ‐---' বেশ কয়েক মাস পর অল্প কিছু কর্মচারী নিয়ে হল অফিস চালু করা হলো। আমিও কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমার বাংলোই ফিরে আসলাম। সুপার ও আবাসিক শিক্ষিকারা তাদের কোয়ার্টারে অবস্থান করছিল । আগস্টের ২৯ থেকে কিছু ছাত্রী হলে আসতে শুরু করলো , আমি হাউসকিউটদের জিজ্ঞেস করলাম দেশের এই পরিস্থিতিতে মেয়েরা কেন হলে আসছে? তারা বললেন গ্রাম থেকে হল অধিক নিরাপদ বলে তারা মনে করছে।

একটি বিশেষ সভা

আক্তার আপার বর্ণনা অনুযায়ী তৎকালীন উপাচার্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন সবল হল প্রধান বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে একটি বিশেষ সভা আহ্বান করেন ।সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাক্তার এম এ মালেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দ ও সামরিক কর্মকর্তা বৃন্দ। মিটিং এর প্রধান বিষয় ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে ও হলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আক্তার ইমাম দৃঢ়ভাবে জানান এই পরিস্থিতিতে ছাত্রীদের হলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি কিছুদিন আগে একটি ঘটনার উল্লেখ করেন , হল প্রধান এর বিনা অনুমতিতে আর্মি অফিসারেরা হলে ঢুকে জিপ থেকে মেশিনগান ফিট করে পুকুরের পানিতে অস্ত্রশস্ত্র আছে কিনা তল্লাশি চালায়। এই মিটিংয়ে উপাচার্য কোন কথা বলেননি কথাবার্তা যা বলেছেন গভর্নর ও সামরিক কর্মকর্তারা ।তারা পুনরায় ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে প্রস্থান করেন।

দশম পর্ব

হলে ডাকাতি

৯ নভেম্বর ১৯৭১ এই সময় হলে ৩০ জন ছাত্রী উপস্থিত ছিল তারা বর্ধিত ভবনের এক তলায় অবস্থান কর ছিল সুপার ও তাদের সাথে একটি কক্ষে অবস্থান করতোl রাতে কলাপসিবল গেট লাগানো থাকতো।৯ নভেম্বর রাতে গেট টপকে , প্রায় একশত জনের একটি ডাকাত দল হলে প্রবেশ করে। ছাত্রীরা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয় ডাকাত দল ছিল অদ্ভুত পোশাক পরা তাদের মুখ ছিল মুখোশে ঢাকা। রাত ছিল গভীর আক্তার ইমাম কান্নাকাটি ও চিৎকারের শব্দ শুনে জেগে উঠেন । এরপর তার বেয়ার কে পাঠান খবর নিতে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে তার বাড়িও ১০-১২ জন ডাকাত কর্তৃক আক্রান্ত হয় ।তার বাসায় সদ্য বিদেশ ফেরত তার মেয়ে জামাই ও নাতনি ছিল ,ডাকাতেরা প্রত্যেককে বাথরুম থেকে টেনে বের করে বন্দুক ধরে টাকা পয়সা গয়নাগাটি ডলার ইত্যাদি কেড়ে নিয়ে তাদের গলায় ঝুলানো একটি পুটলিতে রাখে। আক্তার আপা ও আলমারি খুলে টাকা পয়সা বের করে দিতে বাধ্য হন ।ডাকাতেরা টেলিফোন লাইন ও বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দিয়েছিলো। আক্তার আপার বেডরুমের টেলিফোন লাইন থেকে তার কন্যা মার্শাল ল এডমিস্টেটর কে টেলিফোন করার কথা বলায় ডাকাতেরা তড়িৎ গতিতে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ।এইবার প্রভস্ট ছাত্রীদের খবর নিতে হলে প্রবেশ করেন ,হল সুপার সহ ছাত্রীরা আক্তার ইমামের বাড়ির দিকে আসছিল ,তিনি ছাত্রীদের মুখে শুনতে পান তাদেরকে বন্দুকের মুখে আটকে তাদের গয়না গাটি ও টাকা পয়সা কেড়ে নিয়েছে জানা গেল। একটি পয়েন্ট টুটু এর গুলিও ছোড়া হয়েছিল বলে জানা যায় ছাত্রীদের আর্ত চিৎকার ও কান্না আক্তার ইমামকে গভীরভাবে স্পর্শ করে, ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে না পারার অপারগতা অধ্যক্ষকে বিবেচ্ছেদ করছিল ।তখন প্রায় সকাল হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে আরো দুজন হাউস টিউটর এসে যোগ দেয় তারা তাদের কোয়াটার থেকে শব্দ শুনে বের হয়ে এসেছিল ।তারা দুজন বর্ধিত ভবন পরিদর্শন করে এবং একটি কক্ষে একটি বুলেট খুঁজে পায় সৌভাগ্যক্রমে বুলেটটি দ্বারা কেউ আহত হয়নি। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে হল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় সব ছাত্রীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

এইদিকে খবর পেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের চিপ সেক্রেটারি কয়েকজন আর্মি অফিসার ও উপাচার্য হল পরিদর্শনে আসেন। চিপ সেক্রেটারি বলেন পাহারা জোরদার করা হবে ছাত্রীরা যেন হল ত্যাগ না করে ।প্রাধ্যক্ষা এই দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং তিনি নিজেও এই বাংলোই থাকতে পারবেন না বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি বলেন আমাকে ক্যাম্পাসের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। পরে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় আক্তার ইমাম ক্যাম্পাসের ৩১ নাম্বার বাসার চারতলায় একটি ফ্ল্যাটে উঠে যান।

চলবে.......