আজ সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৪   |   sonalisandwip.com
খতনা করার আগে-পরে যেসব বিষয় জানা জরুরি : ডা. রেজা আহমদ, কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সিলেট

শীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এ জন্য এই সময় অধিকাংশ পরিবার তাদের সন্তানদের খতনা বা মুসলমানি করিয়ে থাকেন। গ্রাম অঞ্চলে খতনার অনুষ্ঠান অনেকটাই উৎসবের হয়। গ্রামে হাজাম দিয়ে খতনা করানো হয়। তবে আধুনিক সময়ে কেউ কেউ ডাক্তার দিয়েও করিয়ে থাকেন কাজটি।

কিন্তু সম্প্রতি রাজধানীতে পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশুর খতনার পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর খতনা নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা ও চর্চা।

শহরাঞ্চলের বা শিক্ষিত মানুষরা সাধারণত শিশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে চিকিৎসক দিয়ে খতনা করিয়ে থাকেন। আর এই খতনা বা সারকামসিশনের আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. রেজা আহমদ।

সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।

খতনা করানোর কারণ:

ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মুসলিম ছেলে শিশুদের খতনা করানো হয়। আবার জন্মগতভাবে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রেও খতনা করানোর নির্দেশ দেয়া হয়। যেমন লিঙ্গের অগ্রভাবের ছিদ্র ছোট থাকলে, বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে।

অনেকের চামড়া গ্লান্স লিঙ্গের পেছনে আটকা পড়ে ব্যথা হয়, তাদেরও খতনা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। মেডিকেলের ভাষায় এই দুটি অবস্থাকে বলা হয় ফাইমোসিস ও প্যারাফাইমোসিস।

এছাড়া কারও কারও জন্য আবার খতনা করা নিষেধ। অনেকেরই হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগ থাকে, তাদের খতনা করতে নিষেধ করা হয়। কেননা, এই রোগীর কাটোছেঁড়া করলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হতে চায় না।

এছাড়া অনেকের প্রস্রাবের নালির ছিদ্র ভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীদের নালি ঠিক করার জন্য অস্ত্রোপচারের সময় লিঙ্গের অগ্রভাবের চামড়া পুনরায় নালি তৈরিতে প্রয়োজন হয়। এ জন্য তাদের খতনা করতে নিষেধ করা হয়।

কোন বয়সে সন্তানের খতনা করাবেন:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন সময় বেছে নেয়া হয় খতনার জন্য। কোনো কোনো দেশে সন্তান জন্মের পরই খতনা করানো হয়। আর এ সময় সন্তান ব্যথাবোধ খুব একটা করতে পারেন না। এতে অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষত শুকিয়ে যায় শিশুর।

তবে সন্তানের খতনার জন্য ৪ থেকে ১২ বছর বয়স ভালো। এ সময় খতনা করলে শিশুর খুব বেশি সমস্যা হয় না। বেশি ছোট শিশুদের খতনা না করানো ভালো। তার ভয় পায় ও কান্নাকাটি করে।

আবার বয়স বেশি হলে তাদের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ইরেকশনের জন্য রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর সন্তানের খতনার আগে তাকে বাড়ি থেকে সবার সাহস দিতে হবে।

কখনোই সন্তানকে না বলে, তার ইচ্ছার বিপরীতে খতনা করাতে যাবেন না। দেখা যাবে জোর করে খতনা করাতে গিয়ে সার্জারির সময় সন্তান আঘাত পেতে পারেন বা সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া আধুনিক এই সময় কিছু ডিভাইস রয়েছে। যা লেজারের মাধ্যমে খতনার সার্জারি করে থাকে। তবে ডিভাইস দিয়ে খতনা করানোর আগে জানতে হবে, ব্যবহারকারী চিকিৎসক এ ব্যাপারে কতটা প্রশিক্ষিত। আবার লোকাল অ্যানেসথেসিয়া বা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমেও অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।

যদি জেনারেল অ্যানেষথেসিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয় তাহলে সন্তানকে ৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু দেশে অবেদনবিদ ও এনআইসিইউ সুবিধা নেই বলে অনেক সময় সন্তানের মৃত্যু হয়। এ জন্য সন্তানের খতনা বা অস্ত্রোপচারের আগে অ্যানেসথেসিয়া কোন ধরবের ব্যবহার করা হবে, এ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেয়া উচিত।

খতনার পর জটিলতা এড়াতে করণীয়:

খতনার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারে যে জটিলতা বেশি হয়ে থাকে তা হচ্ছে রক্তপাতজনিত সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় সন্তানকে বাড়ি আনার পর পুনরায় রক্তপাত শুরু হয়। রক্তপাত বেশি হলে কাপড় দিয়ে প্রথমে চেপে ধরে রাখতে হয়। তারপরও যদি রক্তপান না কমে তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান। সন্তানের খতনার পর লিঙ্গে কোনো ধরনের ইনফেকশন কিংবা অগ্রভাবে ক্ষত হয় কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য সঠিক ড্রেসিং ও ওষুধ খেতে হবে। এতে ঠিক হয়ে যায়। সন্তানের যদি লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়, তাহলে কখনো কখনো লিঙ্গের গোড়া তিন-চারদিন ফোলা থাকার সম্ভাবনা তাকে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এছাড়া খতনার সপ্তাহখানেক পর (এক সপ্তাহ) ক্ষত জায়গা থেকে সামান্য রক্তমিশ্রিত পানির মতো তরল বের হতে পারে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঠিক হয়ে যায়। সন্তানে নিয়মিত হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। এতে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। খতনার পর ঢিলে কাপড় বা লুঙ্গি পরান সন্তানকে, এতে ব্যথা কম অনুভব হবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে যদি ক্ষত সেরে যায়, তাহলে আগের মতো স্বাভাবিক পোশাক পরতে পারবে শিশু।

*  ডা. রেজা আহমদ, কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সিলেট