আজ শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪ || ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
রবিবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৪   |   sonalisandwip.com
একটি ইফতার মাহফিল, একটি বাড়ির ইতিহাস এবং সন্দ্বীপবাসীর আকাংখা- অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ

 অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ :: সোনালী সন্দ্বীপ ::

গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগরীর অলংকার মোড়ে একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় সন্দ্বীপের সাবেক ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের (বর্তমানে জেগে উঠা ভাসানচর) একটি বাড়ির উত্তর পুরুষেরা এক ইফতার মাহফিলে একত্রিত হয়েছিল। আপনার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে এটাও একটা খবর হতে পারে? আশা করি পুরো কন্টেন্টটি পড়লে আপনি উপসংহারে পৌছতে পারবেন।

এইবার আসুন ইফতার মাহফিলে। ন্যায়ামস্তির বিখ্যাত বাদল ফৌজদার বাড়ির উত্তর প্রজন্ম এই ইফতার মাহফিলে একত্রিত হয়েছিল। এখন আসা যাক এই বাদল ফৌজদার বাড়ির বিশেষত্ব কি? কেন আমাদের দৃষ্টি একসময় সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাওয়া একটি বাড়ির উপর নিপতিত হল? এই বাড়িটি বিভিন্ন কারণে সন্দ্বীপের ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে।

সন্দ্বীপের ১৪নং ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের বিখ্যাত বাদল ফৌজদার বাড়ি পুরাতন ভূঁইয়ার হাটের ০৭ কিলোমিটার দক্ষিণে, বাড়ির পূর্ব পাশে ছিল একটি মাইনর স্কুল(অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) ও গাছতলীর হাট,বাড়ির সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ছিল স্বাধীন সন্দ্বীপের রাজা দেলোয়ার খাঁ ওরফে দিলাল রাজার কার্যালয়।

এই বাড়িটি সন্দ্বীপের ১৮ কানি (চট্টগ্রামের ১৮×৪=৭২ কানি) সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৮ কানি জমির মধ্যে পশ্চিম পাশে ৬ কানি বাড়ি ও পূর্বপাশে ১২ কানির উপর এক বিশাল দিঘি বিশিষ্ট এরিয়া নিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির দরজার উত্তর-পূর্ব পাশে অর্থাৎ দিঘির উত্তর-পশ্চিম পাড়ে কোর্ট-কাচারি তথা তৎকালীন ফৌজদারি আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। দিঘির উত্তর পূর্ব পাড়ে ৪টি রায়ত বাড়ির মধ্যে একটি ধোপা বাড়ি, একটি ভেড়া (বেহারা অর্থাৎ পালকিবাহক) বাড়ি এবং অন্যান্য আরো ২ টি বাড়ি বিদ্যমান ছিলো।

তৎকালীন সন্দ্বীপের বহু সিনিয়র ও গুনি ব্যক্তিবর্গ যেমনঃ ফজলুল করিম ডিপটি, মোহাম্মদ হারিছ মিয়া, মোহাম্মদ সুলতান, আসাদুল হক বারীসহ অন্যান্য ব্যক্তিগন এই বাড়িতে জায়গির থেকে লেখাপড়া করেন।

পূর্ব পুরুষদের পুরাতন বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার আনুমানিক শতবছর পর বাড়ির উত্তর প্রজন্ম এই ইফতার মাহফিলে একত্রিত হয়েছিল। এদের অতীত যে কতটা সমৃদ্ধ ছিল পাঠক ইতিমধ্যে তা অবহিত হয়েছেন।

এদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি সরকারের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে এখন আরাকান থেকে বিতাড়িত, ভাগ্য বিড়ম্বিত রোহিঙ্গাদের দখলে। এই ঘটনা সন্দ্বীপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ন্যায়ামস্তির সাবেক বাসিন্দাদের বুকের ভিতর ছাই চাপা আগুনের ন্যায় প্রতিনিয়ত ধিক ধিক করে জ্বলছে।

অধিকার বঞ্চিত এই মানুষগুলো এমনিতেই বসে নেই। ওরা সংগবদ্ধ হবার চেষ্টা করছে এবং যোগাড় করছে পুরনো কাগজপত্র ও নকশা। ওদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে পার্লামেন্টে আমাদের প্রতিনিধি জনাব মাহফুজুর রহমান মিতার কন্ঠে এবং সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতির সোচ্চার ভূমিকায়।

আমরা প্রত্যাশা করব সদাশয় সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সরকার অচিরেই সন্দ্বীপের ৬০ মোজা (৭৫ মোজার সন্দ্বীপ থেকে নোয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সময় ১৫ মৌজা কেটে রাখা হয়েছিল) সন্দ্বীপবাসীকে বুঝিয়ে দেবে।