আজ বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪ || ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার, ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন
সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩   |   sonalisandwip.com
সন্দ্বীপবাসীর  নিরাপদ নৌ-যাতায়াত সমস্যা ও  এ প্রসংগে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত 

সন্দ্বীপ যেহেতু বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড থেকে সম্পুর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন এবং একমাত্র নদী পথেই সন্দ্বীপের জন সাধারণকে মুল ভূখন্ডে যাতায়াত করতে হয় তাই সন্দ্বীপের যাতায়াত সমস্যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আলাদা।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা নিরাপদ, আরামদায়ক ও সুশৃংখল ছিল। পশ্চিমদিকে এম/ভি আলাউদ্দিন আহমেদ,মনিরুল হক, আবদুল মতিন ও এম/ভি বার আউলিয়ার মত ৩/৪ টি বিলাসবহুল, নিরাপদ স্টীমার সার্ভিস সপ্তাহে ৩/৪ দিন সদরঘাট-সন্দ্বীপ রুটে চলাচল করতো এবং পুর্বদিকে কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে ছিলো প্রতিদিন নিয়মিত স্টিমার সার্ভিস।

যদিও তখন পূর্বদিকে উঠানামার কোন সুব্যবস্থা ছিলনা। তাই মানুষ পশ্চিমদিকের স্টীমার সার্ভিসে চলাচলে বেশি পছন্দ করতো। ২০১৬-১৭ সালের পর থেকে সন্দ্বীপের পশ্চিম দিকে চর জেগে উঠায় পশ্চিম দিকের দীর্ঘদিনের স্টীমার সার্ভিসটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র কুমিরা- গুপ্তছড়া রুট হয়ে উঠে সন্দ্বীপবাসীর মুল ভূখন্ডে অর্থাৎ চট্টগ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ।

প্রতিদিন হাজার হাজার সন্দ্বীপবাসীকে এই পথেই চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে হয়। উল্লেখ্যযোগ্য তেমন কোন নিরাপদ নৌপথ না থাকায় মানুষ কে এই একটি রুটের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা কিন্তু এখানে সমস্যার কোন শেষ নাই।যদিও ইতোমধ্যে পূর্বদিকে নতুন লেন্ডিং স্টেশন হয়েছে,নতুন স্টিমার এসেছে।কিন্তু সমস্যা আমাদের পিছু ছাড়ছেনা।

কিছু কিছু সমস্যার উপর আমাদের হাত নাই। প্রকৃতির উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়।কোটি টাকা ব্যায়ে লেন্ডিং স্টেশন করা হলেও আমরা সেই জেটি/লেন্ডিং স্টেশন থেকে কাংখিত সুফল পাচ্ছিনা। যে সকল সমস্যা আমরা নিজেরা নিরসন করতে পারি তাও আমরা করছিনা। এখানে কিছু মানুষের স্বার্থ জড়িত। এই কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের কাছে সমগ্র সন্দ্বীপবাসী জিম্মি হয়ে আছে।

আমি এখানে ঘাটের পুরানো ইতিহাস নাইবা বললাম। কিন্তু অনেক কিছুর সাক্ষী আমরা কিছু মানুষ এখনো বেচে আছি।আমার কথা হল, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভুত উন্নয়ন হয়েছে।আমাদের পদ্মা সেতু হয়েছে, মেট্রোরেল হয়েছে, বঙ্গবন্ধু টালেন হয়েছে, কিন্তু শুধু পিছিয়ে রয়েছি আমরা সন্দ্বীপবাসী। আমাদের সমস্যার কোন সুরাহা হচ্ছেনা। অথচ এটা অসম্ভব কিছুনা। প্রয়োজন আমাদের সদিচ্ছার, প্রয়োজন জনগনের প্রতি আমাদের কমিটমেন্টের।

আমার বিশ্বাস এটা যদি সন্দ্বীপের সমস্যা না হয়ে বাংলাদেশের অন্য কোন অঞ্চলের সমস্যা হতো তা অনেক আগেই এর সমাধান হয়ে যেত।জনগন কোনভাবেই এই অনিয়ম বরদাস্ত করতনা।।

আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই,নিজেরা যদি নিজেদের অধিকার আদায় করতে উদ্যোগী না হই, নিজেরা যদি নিজেদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম না করি তাহলে কেউ আমাদের এই সমস্যার সমাধান করে দিবেনা। আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।প্রতিবাদি হতে হবে। অন্যায় জুলুমের প্রতিবাদ করতে হবে।

তবে আশার কথা হলো, আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রতিবাদ করতে শিখেছে।একদিন তারা তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেদিনের প্রতিক্ষায় থাকলাম.....

সন্দ্বীপের নৌপথের স্থায়ী সমস্যার সমাধানে আমার কিছু ব্যাক্তিগত মতামত তুলে ধরলাম সংশ্লিরা এগুলো বিবেচনায় এনে এগিয়ে যেতে পারেন:...

১. যে কোন ভাবেই জেলা পরিষদকে এই ঘাট থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।তাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা না গেলে এই সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান হবেনা।তারা সম্পুর্ন বে -আইনীভাবে ঘাট দখল করে রেখছে এবং সব সমস্যা জিইয়ে রেখেছে।

জেলা পরিষদ এখানে বৃটিশ বেনিয়াদের মত ঢুকে আমাদের দুর্বলতার সুযোগে এটি গ্রাস করে ফেলেছে। তারা এই কাজে ব্যবহার করছে আমাদের কিছু লোককে।তাই প্রথমে জেলা পরিষদকে হটিয়ে এখানে বিআইডাব্লিওটিসির কতৃত্ব পুনঃবহাল করতে হবে।জেলা পরিষদ শুধুমাত্র তাদের গুদি ব্যবহার বা মালামাল পরিবিহন করতে পারবে।যাত্রী পারাপারে তাদের আইনগত কোন এখতিয়ার নাই।।

২. কুমিরা- গুপ্তছড়া রুটকে নৌ-বন্দর ঘোষনা করে সরকারি বেসরকারি সকল প্রকার বৈধ নৌ্যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে হবে।উম্মুক্ত প্রতিযোগিতা হলে মানুষ সর্বোচ্চ সেবা পাবে।দিনরাত ২৪ ঘন্টা মানুষ নির্বিঘ্নে সন্দ্বীপ যাতায়াত করতে পারবে।।

৩.সন্দীপের অন্যান্য ঘাট গুলিকেও অবকাঠামো উন্নয়ন করে( উভয় পাড়ের রাস্তা সহ) মানুষের যাতায়াতের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এতে একটি ঘাটের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমবে।।

আমার মনে এই তিনটা বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের নিরাপদ নৌপথের স্থায়ী সমাধান অনেকাংশে সম্ভব হবে।। বাকী সমস্যাগুলিও আস্তে আস্তে সমাধান হয়ে যাবে।।

আমি মনে করি মাননীয় সংসদ এব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে পারেন, তরুন প্রজন্মের সাথে কথা বলতে পারেন,আমরা যারা দীর্ঘকাল যাবত এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছি চাইলে আমাদের সাথেও আলোচনা করতে পারেন।সর্বোপরি সন্দ্বীপের মানুষের স্বার্থে উনি যদি কোন ভুমিকা নেন সন্দীপের মানুষ অবশ্যই তার সাথে থাকবে।।

# মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম